বিশ্বকাপে রেফারিং করা বাংলাদেশি রেফারির ফ্রান্সযাপন

বিশ্বকাপে রেফারিং করা বাংলাদেশি রেফারির ফ্রান্সযাপন

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাহবুবুর রহমান কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া একটি নাম। অথচ তিনি ছিলেন এক সময় বাংলাদেশের শীর্ষ রেফারিদের একজন। অনেকদিন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের এলিট প্যানেলেও ছিলেন। দেশ-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে রেফারিং করা রেফারি মাহবুব এখন নিভৃতে থাকছেন ফ্রান্সে। 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাহবুবুর রহমান কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া একটি নাম। অথচ তিনি ছিলেন এক সময় বাংলাদেশের শীর্ষ রেফারিদের একজন। অনেকদিন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের এলিট প্যানেলেও ছিলেন। দেশ-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে রেফারিং করা রেফারি মাহবুব এখন নিভৃতে থাকছেন ফ্রান্সে। 

প্যারিস অলিম্পিক গেমস কাভার করতে আসা সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্ট দেখে মাহবুব ফোন করেন। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও পরিচয়ের খাতিরে ২০-৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্যারিসে আসেন মাহবুব। গার্দে নর্দে বসে খুললেন এক যুগ আগে রেফারিং ও বাংলাদেশের ফুটবলের স্মৃতির ঝাপি, ‘আহ সেই সোনালী দিনগুলো। আবাহনী-মোহামেডান, আবাহনী-ব্রাদার্স কত কঠিন ম্যাচ করেছি।’

সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া নেন। তবে রেফারিদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। এরপরও সাংবাদিক-রেফারিদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই প্যারিসে বসে মাহবুব দেশের অনেক সাংবাদিকের খোঁজ জানতে চেয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাকে নিয়ে অনেক লিখেছে। রেফারিদের দেনা-পাওনা নিয়ে সাংবাদিকরাই ছিল সব সময় সোচ্চার। অনেক সাংবাদিক এখনও আমার খোঁজ নেয়।’

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠিত রেফারি ছিলেন মাহবুব। এএফসি এলিট প্যানেলে থাকায় তিনি এশিয়ার অনেক শীর্ষ ম্যাচে রেফারিং করেছেন। এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাঁশি বাজিয়েছেন বিশ্বকাপেও। সেই স্মৃতি স্মরণ করলেন গর্বভরে, ‘২০০৩ সালে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফিফা অ-১৭ বিশ্বকাপে সহকারী রেফারি ছিলাম। হোক সেটা অ-১৭। বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই। বাংলাদেশের একজন সহকারী রেফারি বিশ্বকাপে রেফারিং করা দারুণ গর্বের ছিল।’ ফিফা পরীক্ষায় পাশ করলে রেফারিরা ফিফা কার্ড পান। এক যুগ আগে সর্বশেষ ফিফা কার্ড এখনও রয়েছে মাহবুবের মানিব্যাগে, ‘এটা সব সময় সঙ্গে রাখি। আমার অমূল্য অর্জন।’

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রেফারিং মানেই তৈয়ব হাসান। যিনি সবচেয়ে বেশি সময় এএফসির এলিট প্যানেলে ছিলেন। তৈয়ব ও মাহবুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাংবাদিকদের পেয়ে তৈয়বের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন মাহবুব। ওপ্রান্ত থেকে তৈয়ব বলে উঠলেন, ‘বন্ধু, কেমন আছো বলো।’ দুই বন্ধুর মুঠোফোন আলাপচারিতার মধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে আসল ফোন। ওপ্রান্ত থেকে তৈয়ব হাসান বলছিলেন, ‘মাহবুব ও আমি একসঙ্গে আন্তর্জাতিক অনেক ম্যাচ করেছি। বাংলাদেশের একজন খুব গুণী রেফারি সে।’

২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি এএফসি এলিট সহকারী রেফারি ছিলেন। ফিফার নিয়ম ছিল ৪৫ বছরের বেশি হলে রেফারিং করা যাবে না। বয়সের কারণে ২০১১ সালের পর রেফারিং ছাড়লেও রেফারিজ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছিলেন। বাফুফের রেফারিজ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছিলেন ওই সময়। ফুটবলার-কোচ কাড়ি কাড়ি অর্থ পেলেও রেফারিদের সম্মানী খুবই সামান্য। সেটাও থাকে বকেয়া। তাই রেফারিদের অন্য পেশার দিকেই মনোযোগ দিতে হয়। মাহবুব গাজীপুরেই ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন।

রেফারি অঙ্গন ছিল মাহবুবের দ্বিতীয় পরিবার। পরবর্তীতে রেফারিংয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়েই ফ্রান্স আসা তার। এই সম্পর্কে বলেন, ‘ফ্রান্সে আমার ভাই থাকে। ভিসা আবেদন করলাম, পেয়ে গেলাম। তখনই ফ্রান্সে আসার সিদ্ধান্ত নিই। বাংলাদেশের অন্য সেক্টরের মতো রেফারিংয়েও রাজনীতি রয়েছে। এজন্য অনেক কাজই করতে পারিনি। মন উঠে যাওয়ায় বিদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

এক দশক ধরে ফ্রান্সে বসবাস রেফারি মাহবুবের। অনেক দূরে থাকলেও হৃদয়ের গহীনে সেই ফুটবলই রয়েছে বলে জানান সাবেক এই রেফারি, ‘এক নাগাড়ে ফুটবলের খোঁজ সেভাবে রাখা হয় না। মাঝেমধ্যে রেফারি ও ফুটবলারদের সঙ্গে কথা হয়। ফেসবুকে ফুটবলের বিভিন্ন নিউজ দেখি।’

ব্যক্তিজীবনে মাহবুবের দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। বড় ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। পুত্রবধূও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছোট ছেলে। 

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *