যেভাবে কৃষিগুচ্ছে প্রথম জাইমুন ইসলাম

যেভাবে কৃষিগুচ্ছে প্রথম জাইমুন ইসলাম

ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন, সেই লক্ষ্যে চলছিল প্রস্তুতিও। কিন্তু মাঝখানে ছন্দপতন হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল প্রকাশ হলে। প্রত্যাশানুযায়ী ফলাফল করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসায় শুনতে হয় নিন্দুকের সমালোচনা। এবার সব সমালোচনার জবাব দিয়ে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করলেন ময়মনসিংহের জাইমুন ইসলাম।

ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন, সেই লক্ষ্যে চলছিল প্রস্তুতিও। কিন্তু মাঝখানে ছন্দপতন হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল প্রকাশ হলে। প্রত্যাশানুযায়ী ফলাফল করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসায় শুনতে হয় নিন্দুকের সমালোচনা। এবার সব সমালোচনার জবাব দিয়ে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করলেন ময়মনসিংহের জাইমুন ইসলাম।

দেশের নয়টি কেন্দ্রে গত ২৫ অক্টোবর একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ৩৫ হাজারের অধিক পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের এই শিক্ষার্থী। জাইমুন ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায়। ২০১৮ সালে বাবাকে হারানোর পর মা আর বড় বোনকে নিয়ে চলে তার জীবন-সংগ্রাম। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী জাইমুন পড়াশোনা করেছেন গোকুল চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,পয়ারী স্কুলে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বাকৃবি চত্বরে অবস্থিত কেবি কলেজে।

এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও ইংরেজিতে ‘এ মাইনাস’ আসায় খুশি হতে পারেননি জাইমুন। কারণ তাকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। হতাশা আর সমালোচনার চাপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। ফলস্বরূপ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবস্থান করতে পারেননি। এরপর শেষ সময়ে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন জাইমুন। প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের চিন্তায় আবারও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন ভর্তি পরীক্ষার জন্য। মাঝে কিছুটা বাড়তি সময় পেয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সহজ হয়। ফলে কৃষিগুচ্ছের জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন জাইমুন। ভর্তি পরীক্ষাও খুব ভালো দিতে সক্ষম হন তিনি, চান্স পাওয়া নিয়ে ছিলেন আশাবাদী। পরীক্ষায় ৯৯টি প্রশ্নের উত্তর করেন, যার মধ্যে ৯৭টিই সঠিক হয়। এর ফলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জনের কৃতিত্ব গড়েন জাইমুন। এখন তার ইচ্ছা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে পড়ার। কৃষি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করা, কৃষি নিয়ে গবেষণা এবং বাংলাদেশের কৃষিতে অবদান রাখার ইচ্ছাও তার।

সাফল্যের পেছনের গল্প শোনাতে গিয়ে জাইমুন বলেন, সত্যি বলতে এডমিশনে আমার মূলত ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া। কিন্তু এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর আমি ভাবলাম হয়ত ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগুলো আমি দিতে পারব না। তাই পরবর্তীতে আর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রিপারেশন নিইনি। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করি, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি যদি সেই সময়টাই ভালো করে প্রিপারেশন নিতাম, হয়ত ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগ পেতেও পারতাম। কিন্তু আজকের যে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করার সাফল্য, সেটা হয়ত আমি কখনোই পেতাম না। আমি আমার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত খুশি।

জাইমুন তার সাফলতার কৃতিত্ব দিলেন তার দাদা ও শিক্ষকদের। তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পড়ালেখা ও আমার পরিবারের যাবতীয় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন আমার দাদা আবু তালেব। তিনি আমার বাবার বড় চাচা। তিনি আমাদের ফুলপুরে একজন ব্যবসায়ী। উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। নিঃস্বার্থভাবে একজন মানুষ এতকিছু করতে পারেন সেটা বাস্তবিক পক্ষে আমি উনাকে দেখে জেনেছি। বলা যায় আমার এই কৃতিত্বের পেছনে আসল হিরো হচ্ছেন আমার দাদা। উনার সাপোর্ট, মোটিভেশন আজকে আমাকে এখানে দাঁড় করিয়েছে। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। দাদা ছাড়াও আমার চারপাশের যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।

জাইমুন আরও বলেন, আমাকে যারা গড়ে তুলেছেন আমার সকল শিক্ষকদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ সকলেই অনেক আন্তরিক ছিলেন। বিশেষ করে কলেজে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কলেজের শিক্ষকদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ এবং অত্যন্ত উপকারী। গাইডলাইনের ক্ষেত্রে আমার শিক্ষকরা আমার জীবনে অনেক বেশি অবদান রেখেছেন।

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে জাইমুন বলেন, একটাই কথা বলার থাকবে, জীবনের যেকোনো অবস্থান থেকে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিশ্রম করতে হবে, তবেই সফলতা অবশ্যই ধরা দেবে। আর সফলতার কোনো শর্টকাট নেই। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা কখনোই জীবনে ভালো কিছু দেবে না। ১০টা দিন হতাশ হয়ে নষ্ট না করে ন্যূনতম চেষ্টা করলেও অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। আর সবার মাঝে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে সেটা সব সময় বিশ্বাস করতে হবে।

জাইমুনের সাফল্যে প্রসঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আতাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়ার জন্য জাইমুনকে অভিনন্দন জানাই। এই অর্জনের মাধ্যমে সে তার পরিবার ও কলেজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অনেক আগে থেকেই আমাদের কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও কাঠামো অত্যন্ত সুগঠিত। কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছু হয়ে থাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষকেরা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করে থাকে। এর ফলে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিকেল, প্রকৌশলসহ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আমি জাইমুনসহ কেবি কলেজের সকল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছি।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *