হাসিমুখে ইলিশ শিকারে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরছেন জেলেরা 

হাসিমুখে ইলিশ শিকারে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরছেন জেলেরা 

ইলিশ শিকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক আশা নিয়ে নদীতে গিয়েও জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পরায় হতাশ ভোলার ২ লক্ষাধিক জেলে। বিগত দিনের ধারদেনা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় তারা। তেল খরচও না ওঠায় নদী বিমুখ হয়ে পড়ছেন অনেক জেলে। আড়তে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় মোকামের দাদন নিয়ে চিন্তিত আড়তদাররা।

ইলিশ শিকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক আশা নিয়ে নদীতে গিয়েও জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পরায় হতাশ ভোলার ২ লক্ষাধিক জেলে। বিগত দিনের ধারদেনা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় তারা। তেল খরচও না ওঠায় নদী বিমুখ হয়ে পড়ছেন অনেক জেলে। আড়তে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় মোকামের দাদন নিয়ে চিন্তিত আড়তদাররা।

গত ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকারে নামেন জেলেরা। কিন্তু নদীতে মাছ শিকারের জন্য নেমে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছেন জেলেরা। 

সরেজমিনে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার নদীতীর ও কয়েকটি মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নদীতে ইলিশ শিকারে নেমেছেন। আবার কেউ কেউ ইলিশ বিক্রির জন্য ঘাটের আড়তগুলোতে নিয়ে আসছেন। আড়তে ইলিশ বিক্রির পর খরচের হিসেব মেলাতে গিয়েই তাদের মাথায় হাত। কারো ট্রলারের তেলের খরচই ওঠেনি, আবার কেউ ভাগে পেয়েছেন মাত্র ২০০ টাকা।

৪ জন মাঝিমাল্লাসহ ভোলার মেঘনায় ইলিশ শিকারে আসা বরিশালের আব্দুল সালাম বলেন, অভিযান শেষে আমরা ধারদেনা হইয়া আসছি নদীতে মাছ ধরতে। নদীতে এখন মাছ কম। নিজেরাই চলাফেরা করতে কষ্ট। আগামী দিনে কিভাবে চলব আল্লাহই ভালো জানে।

তেতুলিয়া নদীর মাঝি জাফর মাঝি বলেন, রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ খেও জাল বাইছি। নদীতে ইলিশ মাছ কম। মনে করছি বড় বড় ইলিশ মাছ পাব।এখন আমাদের আশা পূরণ হচ্ছে না। বিগত দিনের দেনা তো আছেই। আশা করছিলাম ইলিশ মাছ ধইরা দেনা পরিশোধ করব। মোট সাড়ে ৩ হালি ইলিশ পাইছি, বিক্রি করে ১২০০ টাকা হইছে। 

জেলে মো. হারুন বলেন, রাতে গাঙ্গে গিয়ে দুপুর বেলায় আসছি। ঘাটে মাছ বিক্রি করে ২০০ টাকা করে সবাই ভাগে পাইছি। এখন নদীতে গেলে আমাদের সংসারই চলে না।

মো. মনির হোসেন মাঝি বলেন, নদীতে গিয়ে ১৯৫০ টাকার মাছ পাইছি এতে আমাদের তেলের টাকাই ওঠেনি। নদীতে বড় ইলিশ এক্কেবারেই নেই, একটাও পাইনি।

মেঘনা-তেতুলিয়ায় পাঙাস মাছ শিকার করেন জেলে মো. মোসেলেম। তিনি বলেন, আমরা ৩ জন জেলে গাঙ্গে গেছি। দেড় হাজার টাকা খরচ হইছে। কিন্তু একটা মাছ ও পাইনি, খুব লসে আছি।

ভোলার খাল মাছঘাট, ইলিশা চডার মাথা মাছঘাট ও তুলাতুলি মাছঘাটের কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলেরা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ তারাও। 

আড়তদার মো. ইমতিয়াজ বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা আড়ৎ খুলছি। জেলেরাও নদীতে গেছে। গত বছরের তুললায় এ বছর অভিযানের পর ইলিশ তিন ভাগের একভাগ ও নেই। ইলিশের সরবরাহ কমের কারণে আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। ইলিশ থাকলে ব্যবসা চাঙা থাকতো। বিভিন্ন মোকাম থেকে দাদন এনে জেলেদের দিছি। জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ পায় না। এখন আমরা সবাই হতাশাগ্রস্ত।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন মরা গোন (কৃষ্ণপক্ষ)। সামনে পূর্ণিমা আসছে। পূর্ণিমা শুরু হলে ইলিশ ফের নদীতে আসবে। ইতোমধ্যে যে ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে এসেছে সেগুলো সাগরে ফিরে গেছে। যার কারণে জেলেদের জালে কম ইলিশ ধরা পরছে। তবে সামনের গোন থেকে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবে বলেও আশাবাদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। 

উল্লেখ্য, জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোলায় ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যা ভোলা জেলায় বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ইলিশের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা।

আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *