একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত পেলেও ভর্তির সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে বোর্ড কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারীদের এ ঘটনায় কোনো শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না।

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত পেলেও ভর্তির সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে বোর্ড কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারীদের এ ঘটনায় কোনো শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না।

এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে দেবেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩৩০ টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত ৩০ জুলাই জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ‘মানিকগঞ্জ সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে বোর্ডের নির্দেশনা না পাওয়ায় এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শহীদুজ্জামান।

জানা গেছে, ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হকের কাছে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আবেদন করেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জাহিদুল হক। পরে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ চলতি শিক্ষাবর্ষের এক হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া শুরু করে। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩৮০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ভর্তি কমিটির সদস্য বায়েজীদ হাসান মোবাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ কেন আদায় করা হয়েছিল, আর এখন কেন টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে?

প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আপনার নাম কি? কোন পত্রিকায়, কীসের সাংবাদিক।’ প্রতিবেদক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত, আপনি কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে জেনে নিয়েন। এই টাকা প্রতি বছরই নেয়। টাকা নিয়েছে, আবার ফেরতও দিচ্ছে। এটা নিয়ে ঝামেলা কি বলেন।’

তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা এসে অধ্যক্ষের কাছে জিজ্ঞেস কইরেন, কেনা টাকা নিছিল, আবার এখন কেন ফেরত দিচ্ছে। এটা নিয়ে নিউজ হইছে, ডিসি অফিসসহ অনেক কিছু হইছে। এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।’ এ কথা বলে তিনি কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক  ড. মুহাম্মদ মাহফিল খানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে বলে আবার সেই টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে ভর্তি কমিটির যারা এই টাকা আদায় করেছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তাহলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে অন্য কেউ করতে উৎসাহিত হবে না এবং একটা স্বচ্ছতাও থাকবে।

জানতে চাইলে সরকারি দেবেন্দ্রে কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আমি কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে ৩৩০ টাকা করে বেশি আদায় করা হয়েছিল। এটা শিক্ষা পরিপত্রের বাইরে আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু এই টাকাটা নেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল উপস্থিতি মেশিন ও সফটওয়্যার কেনার জন্য। তবে এটি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার পরে আমিই সেই টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে বলি। গত ৩১ আগস্ট আমি অবসরে গিয়েছি, এর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি যেন প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে টাকাগুলো ফেরত দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুজ্জামানের নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সোহেল হোসেন/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *