নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পাবিপ্রবি‌ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের মতবিনিময়

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পাবিপ্রবি‌ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের মতবিনিময়

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে ছাত্রদল। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে ছাত্রদল। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সুমিত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাইয়্যুমুল হাসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফারহান আরিফ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাবিপ্রবিতে গণসংযোগ করতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠের পশ্চিমে মুক্তমঞ্চের পাশে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দলীয় গণসংযোগ পরিচালনা করেন।

এসময় তারা শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি তাদের মধ্যে ছাত্রদলের ‘গৌরবোজ্জ্বল অতীত : সংগ্রামী বর্তমান ও আগামীর প্রতিশ্রুতি’ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ‘তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ সংবলিত দুটি ছোট বই বিলি করেন।

সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন উপলক্ষ্যে প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৫০ জনের মতো নেতাকর্মী জড়ো হন। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এলে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর কর্মীদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা বাইরে অবস্থান নেন। প্রায় এক ঘণ্টার গণসংযোগকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রদল নিয়ে মতামত শোনেন ও ছাত্রদলের দলের কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদলের এমন কার্যক্রমে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন রাজনীতিমুক্ত একটি ক্যাম্পাসে এভাবে গণসংযোগ করা এবং দলের বই-পুস্তক বিতরণ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনভঙ্গের শামিল।

পাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, এটা সবাই জানে। ছাত্রদলের উচিত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। কিন্তু তারা সেটা না করে প্রকাশ্যে আজ গণসংযোগ করেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু নামেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কিন্তু আমরা বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাই না। আজ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্যাম্পাসে এসে গণসংযোগ করবেন, এটা নিশ্চয়ই তাদের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ হতাশাজনক।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মজনু আলম বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতির প্রবেশ, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের এমন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকবে, সেটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতি চাই না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক একরামুল হক লিমন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে গণসংযোগে আসা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সুমিতের কাছে বিষয়টা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো গণসংযোগ ছিল না। তবে একটা মতবিনিময় ছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ কি না সেটা কি তোমার কাছ থেকে আমার জানতে হবে? আমি রাস্তায় গাড়িতে, তুমি আমার সাথে সামনাসামনি দেখা কইরো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। বিষয়টা মাত্র জানলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিকে সমর্থন করে না। আমি ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টার তদন্ত করব এবং কারা এটার সঙ্গে জড়িত, সেটা আমরা খুঁজে বের করব।’

উল্লেখ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১৩ আগস্ট ছাত্র রাজনীতিসহ সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *