দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি মাহফুজুর রহমানের (৪৮)। যিনি বর্তমানে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। এবার তিনি বদলি হয়ে আসতে চান চট্টগ্রামের সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি মাহফুজুর রহমানের (৪৮)। যিনি বর্তমানে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। এবার তিনি বদলি হয়ে আসতে চান চট্টগ্রামের সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে।
সম্প্রতি তিনি মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বরাবরে একটি আবেদনও করেছেন। সেই আবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সই করেছেন চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমাও। যদিও তিনি বলেছেন এটা তার রুটিন ওয়ার্ক।
এদিকে, চাকরিজীবনে বিভিন্ন দপ্তরে বিশেষ করে সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুই হাতে টাকা কামানোর কারণে আলোচিত মাহফুজ। তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করে ইতোমধ্যে দুদকের মামলার আসামিও হয়েছেন তিনি। এখন তার সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে বদলি চাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। কারণ সদর কার্যালয়ে দায়িত্ব পেলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারণা অনেকের। যদিও অভিযোগ উঠেছে মাহফুজের সদর কার্যালয়ে বদলি করে আনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্পত্তি অর্জন ও অর্জনের তথ্য গোপনসহ নানা অভিযোগে মাহফুজের বিরুদ্ধে গত ২ সেপ্টেম্বর মামলা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে মাহফুজের সঙ্গে আসামি করা হয় তার স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজকেও। মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার উত্তর দেয়াং মোহাম্মদনগর গ্রামে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাহফুজ দম্পতির এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তারা দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১ টাকা মূল্যের সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন। মামলায় দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, ২০২২ সালে দুদকে জমা হওয়া এক অভিযোগ অনুসন্ধান করে মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এরপর কমিশনের নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন দিলুয়ারা মাহফুজ। পরে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের সত্যতা পায় দুদক। দিলুয়ারা মাহফুজের এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার স্বামী মাহফুজুর রহমান সহযোগিতা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
দুদকের মামলার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মাহফুজকে বরখাস্ত না করার কারণ এবং বদলির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বলেন, মাহফুজ দুদকের আসামি হয়েছেন সত্য। কিন্তু দুদক তো তাকে গ্রেপ্তার করেনি। আর আমি যতটুকু জানি মামলাটির তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। দুদক যদি তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয় আমরা তাকে বরখাস্ত করব। এরা আগে তিনি চাকরি করতে পারবেন। আর বদলির জন্য তিনি মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বরাবরে আবেদন করেছেন। নিয়মানুযায়ী আমি সেটি ফরোয়ার্ড করেছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ওই কর্মচারী দুর্নীতি করে টাকা অর্জন করেছেন এবং এগুলো এখন নিরাপদে ভোগ করছেন। এই ভোগ করতে দেওয়াও এক ধরনের অপরাধ। দুদকের উচিত ছিল তাকে কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার এবং তার সম্পদ ক্রোকের আবেদন করা। কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা রুজু হওয়া মানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত অথবা অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর জামিন নেওয়া দরকার ছিল। দুর্নীতি মামলায় পলাতক আসামিকে সরকারি দপ্তরে অফিস করতে দেওয়া বেআইনি। সেখানে তিনি আরও সদর কার্যালয়ে বদলির চেষ্টা করছেন। এখানে এসে তো তিনি আরও বেশি দুর্নীতি করবেন।
আরএমএন/এসএম