পাথর থেকেই ঘরে ভাত আসে তাদের

পাথর থেকেই ঘরে ভাত আসে তাদের

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সমতল ভূমিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া নদীতে পাথর উত্তোলন করে ওই এলাকার বহু শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের বিধি-নিষেধের কারণে পাথর তুলতে পারছেন না তারা। এতে করে কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করলেও বিশাল একটি অংশ এখনও জড়িত রয়েছেন পাথরের সাথে।

তেঁতুলিয়ার যে ক’টি নদীতে নুড়ি পাথর পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম ডাহুক নদী। দেশের সীমান্তবর্তী এ উপজেলার দেড় লাখ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ অংশই জড়িত রয়েছেন পাথর শ্রমের সাথে। শ্রমিকদের একটি বড় অংশকে টিকিয়ে রেখেছে ডাহুক নদীর নুড়ি পাথর। এ নদী থেকে উত্তোলিত নুড়ি পাথরেই চলে হাজার হাজার শ্রমিকের জীবনের চাকা। কোনোভাবে বেঁচে থাকতে পাথর তুলেই চালাতে হচ্ছে সংসার। হঠাৎ করে পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বেকার হওয়ার পথে পাথর শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বলছেন, পাথর তুলতে না পারলে তারা পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবেন না।

তবে প্রশাসন বলছেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাথর মহাল ব্যতীত কোথাও পাথর উত্তোলনে নিয়ম নেই। এ ছাড়া ডাহুক নদীর দুটি সেতু সংলগ্ন স্থানে সাধারণ শ্রমিকদের পাথর উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতু। তাই সরকারের দিক থেকে নদীতে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

নদীতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের দাবিতে গতকাল জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের কালিতলা ডহুক সেতু সংলগ্ন এলাকায়  মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন পাথর উত্তোলন শ্রমিকরা। ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে সড়কের ওপর সমাবেশ করেন তারা। এতে শালবাহান-হারাদিঘী পাকা সড়কে আটকে পড়ে বিভিন্ন যানবাহন।

পাথর শ্রমিকরা বলছেন, এক সময় সমতল ভূমি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে পাথর তোলা হতো। এতে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান গড়ে ওঠে। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল অবৈধভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ড্রেজার মেশিনে পাথর উত্তোলন করার কারণে বন্ধ হয়ে যায় পাথর উত্তোলন। এতে বেকার হয়ে পড়ে এ উপজেলার হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। এর পরে আমরা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করতে চাইলেও সে ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারিভাবে শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের। তাই শ্রমিকরা পরিবার বাঁচাতে বাধ্য হয়েই নদীতে নেমে পানিতে ডুবে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তোলেন। 

পাথর শ্রমিক নেতা হারুন অর রশিদ ও হাসনাত  বলেন, পাথর তুলে চলে আমাদের জীবন জীবিকা। যুগ যুগ ধরে নদীতে পাথর উত্তোলন হয়ে আসছে। আমরাও সেই পথে রয়েছি। আমরা গরীব মানুষ। নদীতে পাথর উত্তোলন করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে আমরা না খেয়ে মরে যাবো।

শ্রমিক নেতা মস্তানসের বলেন, আমরা সরকারের সব নিয়মকানুন মেনেই সনাতন পদ্ধতিতে পাথরের উত্তোলন করি। আমাদের পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো আমরা গরীব মানুষরা যেভাবে নদীতে পাথর উত্তোলন করে আসছি সেভাবেই যেন করে যেতে পারি। সরকারের কাছে দাবি জানাবো আমাদের সাধারণ শ্রমিকদের মুখের আহার আপনারা এভাবে কেড়ে নিয়েন না।

তেঁতুলিয়া পাথর শ্রমিক নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক বলেন, দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পাথর শ্রমিক। তেঁতুলিয়ার দেড় লাখ জনগোষ্ঠীরই প্রায় এক লাখ মানুষ এই পাথর শ্রমিক। এই পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় নদীতে পাথর তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তুলতে চান। যদি শ্রমিকরা নদীতে পাথর তুলতে না পারে তাহলে তারা না খেয়ে মারা যাবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি শ্রমিকরা যেন আগের মতো পাথর উত্তোলন করতে পারে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাথর মহাল ব্যতীত কোথাও পাথর উত্তোলনের নিয়ম নেই।  

এস কে দোয়েল/এনএফ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *