ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের খবরে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় উত্তর কোরিয়ার ১০ হাজার সেনা অবস্থান করছে, এমন দাবিও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের খবরে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় উত্তর কোরিয়ার ১০ হাজার সেনা অবস্থান করছে, এমন দাবিও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এমনকি কিছু উত্তর কোরীয় সেনা ইউক্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় রাশিয়া প্রশ্ন তুলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সাহায্য করতে পারলে উত্তর কোরিয়া কেন আমাদের সাহায্য করতে পারবে না?
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া এই প্রশ্ন তুলেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত প্রশ্ন তুলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে কেন উত্তর কোরিয়ার মতো তার মিত্ররা মস্কোকে সাহায্য করতে পারবে না যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো কিয়েভকে সাহায্য করার অধিকার তাদের রয়েছে বলে দাবি করছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউক্রেন এবং অন্যান্যদের কাছ প্রশ্নের মুখে পড়ার পর এই প্রশ্ন সামনে আনেন। এসব দেশের সকলেই উত্তর কোরিয়া কাছ থেকে সৈন্য নিয়ে নিজ ভূখণ্ডে মোতায়েনের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং প্রতিষ্ঠাতা ইউএন চার্টার লঙ্ঘনের জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে।
বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত জুনকুক হোয়াং বলেছেন, “আগ্রাসনমূলক কাজকে সমর্থন করা সম্পূর্ণরূপে জাতিসংঘের সনদের নীতি লঙ্ঘন করে এবং এটি বেআইনি। রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সৈন্য প্রেরণের মতো যে কোনও কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বুধবার বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০ হাজার সৈন্য ইতোমধ্যেই পূর্ব রাশিয়ায় অবস্থান করছে এবং সম্ভবত তাদেরকে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে যুদ্ধ অভিযানে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হবে বলে মনে হচ্ছে।
জবাবে নেবেনজিয়া বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক যোগাযোগ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে না। অবশ্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেনি রাশিয়া।
নেবেনজিয়া বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে তা যদি সত্যও হয়, তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা এই ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তাদের ইউক্রেনকে সাহায্য করার অধিকার রয়েছে? … এবং রাশিয়ান মিত্রদের অনুরূপ কাজ করার অধিকার নেই?”
জবাবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়্যাস জানিয়েছেন: “ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানকারী দেশগুলোর একটিও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার অধীনে নেই।”
তিনি আরও বলেন, “পুরোপুরি-নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করা জাতিসংঘের সনদের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধকে সমর্থন করার জন্য উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”
রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে এবং পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিকাশকে থামানোর লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে এই ধরনের পদক্ষেপগুলো ক্রমাগত জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় সেনা মোতায়েনের কথা স্বীকার করেনি, তবে দেশটি বলেছে, এই ধরনের যেকোনও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সং কিম নিরাপত্তা পরিষদকে জানান, “যদি রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা স্বার্থ উন্মোচিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ক্রমাগত বিপজ্জনক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং যদি এটি মনে করা হয় যে- আমাদের কিছু দিয়ে তাদের জবাব দেওয়া উচিত, আমরা তখন একটি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব।”
তিনি আরও বলেন, “পারস্পরিক নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে পিয়ংইয়ং এবং মস্কো।”
টিএম