মঈনউদ্দীন কমিশনের আকস্মিক পতন, নতুন আলোচনায় যারা

মঈনউদ্দীন কমিশনের আকস্মিক পতন, নতুন আলোচনায় যারা

বিগত আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন কমিশনের পতন হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানসহ কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও কমিশনার আছিয়া খাতুন (অনুসন্ধান) সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন। 

বিগত আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন কমিশনের পতন হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানসহ কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও কমিশনার আছিয়া খাতুন (অনুসন্ধান) সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন। 

দুপুর ২টা ১০ মিনিটে হঠাৎ করেই একসঙ্গে দুদকের প্রধান কার্যালয় ছাড়েন চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার। হঠাৎ এমন ছন্দপতনের মতো তাদের এই চলে যাওয়া কাঙ্ক্ষিত হলেও আজকের যাওয়াটা ছিল ধারণার বাহিরে। কারণ, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া নীরবে চলে যাওয়ার পরই চাউর হয় পুরো কমিশনের পদত্যাগ করার খবর। এমনকি আজ সকালেও দুদকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই বিষয়টি অনুমান করতে পারেননি।

সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার মতোই চলে যাওয়াটাও নীরবেই ঘটে গেল। এমনকি অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতেও সক্ষম হয়েছেন তারা।

দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার আছিয়া খাতুন প্রধান ফটক দিয়ে বের হলেও অপর দুদক কমিশনার জহুরুল হক বের হন পেছনের ফায়ার সেফটির লাল গেট দিয়ে। 

পদত্যাগের বিষয়ে দুদক থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ মুঠোফোনে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।

কী কারণে পদত্যাগ করেছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না।

অন্যদিকে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, দুদক আইন ২০০৪ এর ১০ ধারা অনুযায়ী কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন।

দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ২০২১ সালের ৩ মার্চে নিয়োগ পান। আর ওই বছরের ১০ মার্চ কমিশনার জহুরুল হকসহ তিনি যোগদান করেন। এর দেড় বছর পর আছিয়া খাতুনকে ক‌মিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খানের স্থানে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের পদত্যাগের ঘটনা দুদকের ইতিহাসের দ্বিতীয় উদাহরণ। 

এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করেছিলেন। ওই সময়ে চেয়ারম্যানের শূন্যপদে নিয়োগ পান সাবেক সচিব গোলাম রহমান। 

অন্যদিকে মঙ্গলবার দুদকের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের বৈঠক করার কথা ছিল। বেলা ১টার দিকে সেই বৈঠক বাতিল করা হয়। মূলত পদত্যাগ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ায় ওই সভা বাতিল করে দুদক।

সভা বাতিল ও চেয়ারম্যানসহ তিনজনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে বলা হয়েছে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে তারা পদত্যাগ করেছেন। যেহেতু চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ করেছেন, সে কারণে তাদের অনুরোধেই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। তাদের পদত্যাগ প্রত্যাশিত ছিল, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে তারা পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু সরকারের নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা আছে নতুন কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে। 

তিনি বলেন, এটা সর্বজনবিদিত অতীতে কিংবা বতর্মানে যারা ছিলেন তারা দলীয় প্রভাবভুক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত, ফলে তারা কখনোই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে নাই। এখন যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছেন, তাই আশা করবে অবশ্যই যথাযথ মানদণ্ড বজায় রেখে প্রশাসনিকভাবে দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন। যাদের নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। কোনো ধরনের শূন্যতা তৈরি হওয়ার আগে বর্তমান সরকার নিয়োগ দেবেন। তাদের পদত্যাগ অপরিহার্য ছিল, সে কারণেই এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার তাদের পদত্যাগপত্র কমিশন অফিসে জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদক সচিব এবং সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক অনির্ধারিত বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর দুদক থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে।

কেমন ছিল মঈনউদ্দিন কমিশন 

২০২১ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ। তবে হয়েছে তার উলটো। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ঘুষ ও অর্থপাচারের ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি দুদককে।

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চুনোপুঁটি ধরতেই ব্যস্ত ছিল পুরো কমিশন। আর তাতে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির যে ধারণাসূচক রয়েছে সেখানে নামতে থাকে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম এবং ২০২৩ সালে ১০ম স্থানে নেমে যায় বাংলাদেশ। 

যদিও গত তিন মাসে প্রায় আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও আমলার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে আস্থায় আসার চেষ্টা ছিল ওই কমিশন। গুঞ্জন রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মঈনুদ্দিন কমিশন প্রায় দুই শতাধিক আওয়ামী মন্ত্রী, এমপিকে দায়মুক্তি দিয়েছেন। একইভাবে ৫ আগস্টে পর প্রায় অর্ধশতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীকেও দেওয়া হয়েছে দায়মুক্তি।

আলোচিত যত ঘটনা

২০২৩ সালে দুদক উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের হাত থেকে সরিয়ে সচিবের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এর ফলে খর্ব হয় কমিশনের ক্ষমতা। আমলাতন্ত্রের হাতে বোতল বন্দী হয়ে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয় খোদ কমিশনে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়ে চাকরি হারান আলোচিত দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি ৩ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়া সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বাসায় পুলিশ ও আর্মির অভিযানের সময় তাকে বাঁচানোর জন্য দুদকের দুই কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। অথচ ২০২৩ সালে তার অভিযোগটি পরিসমাপ্ত হয়েছিল। 

বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয় দুদক। পরবর্তীতে পিঠ বাঁচাতে আগ বাড়িয়ে দুদক কর্তৃক রুজুকৃত বিচার চলাকালীন মামলা থেকে প্রসিকিউশন প্রত্যাহার করেছে এই কমিশন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে ৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া সংক্রান্ত আরেকটি মামলা প্রস্তুত করা হয়েছিল। পটপরিবর্তনের কারণে তা আর আগায়নি।

উচ্চআদালতের চাপে সাবেক আইজিপি বেনজিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের সময়ও তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ কোটি টাকা উত্তোলন হয়। প্রশাসন ও দুদকের অবহেলায় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষমও হন।

বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ এস আলমের এক বিলিয়ন ডলার সিঙ্গাপুরে পাচার, ইসলামী ব্যাংকে ভয়ঙ্কর নভেম্বর, হাজার কোটি টাকা পাচার, দুবাইতে গোল্ডেন ভিসায় ৫৪৯ আওয়ামী লীগ নেতার সেকেন্ড হোম অভিযোগসহ সাবেক মন্ত্রীদের অসংখ্য অভিযোগ আমলে না নিয়ে ফেলে রেখেছিল এ কমিশন। 

অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন তার ভাই মহিউদ্দিন আব্দুল্লাহর মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে অভিযোগ পরিসমাপ্ত, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতি করেছেন।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও এই কমিশন আমলে নেয়নি। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে বিপুল সম্পত্তির তথ্য থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের ৪০০ কোটি টাকার তথ্য দুদকে থাকার পারও ওই সময়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আর্থিক খাতে আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাটের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপের ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলসহ নানাবিধ দুর্নীতি; একটিরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন কমিশন।

পুলিশ বিভাগের হারুন, বিপ্লব, হাবিবুরসহ বিভিন্ন দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও অনুসন্ধান না করে ফেলে রাখা হয়। পরে লোক দেখানো অনুসন্ধান চালু করা হয়েছে। 

সরকারের ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমোদন দিয়েছিল, পরে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তা প্রত্যাহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। 

দুদকের সাবেক মহাপরিচালক আ.ন.ম. আল ফিরোজের অনুসন্ধান চলাকালে তাকে দুদকে মহাপরিচালক হিসেবে আনা হয় এবং তার অভিযোগ পরিসমাপ্ত করা হয়।

অপর সাবেক মহাপরিচালক রেজানুর রহমানের শ্বশুর রাজউকের পরিচালক (পরবর্তীতে সদস্য এস্টেট) মো. রেজাউল করিম তরফদারের দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে বনানীর এফ. আর. টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ক্ষতির জন্য দায়ী ও বনানীর হোটেল শেরাটনের নকশার জাল-জালিয়াতিতে তার শ্বশুর রেজাউল করিম তরফদারের সম্পৃক্ততা মামলা হয়।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী থাকাকালীন শত কোটি টাকার টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ ছিল সাবেক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে। পরে দুদকে পরিচালক হিসেবে এসে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

কমিশন গঠনে আলোচনায় যারা

দুদক কমিশন সাজাতে সার্চ কমিটি প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পদ শূন্য না হলে সার্চ কমিটি গঠন করা যায় না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আভাস পেয়েই তিন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শিগগিরই সার্চ কমিটিও গঠন হতে পারে।

দুদক, জনপ্রশাসন ও জুডিশিয়াল সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিশনে চেয়ারম্যান পদে সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এ এইচ এম নুরুল ইসলাম ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।

এ এইচ এম নুরুল ইসলামকে ২০০৪ সালের ৩ জুন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তার নামে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় মামলাও দায়ের করা হয়। 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথিপত্র তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সিডি আকারে সংরক্ষণ করেছিলেন। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে দুদক। আর মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন। কোনও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে তিনি তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধেও দুদকে অনুসন্ধান ছিল। পরে নিষ্পত্তি করা হয়।

অন্য দুই কমিশনার পদে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) প্রশাসন ক্যাডারের মুনীর চৌধুরী, জুডিশিয়াল সার্ভিসের মঈদুল ইসলাম, দুদকের নিজস্ব জনবলের আমীরুল আলম, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নুর আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে মুনীর চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগে। 

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যাদের নাম শোনা যায়, তাদের কমিশনে আনা হয় না। নতুন কমিশনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তাদের পছন্দের লোক খুঁজছেন। প্রশাসন ক্যাডারও তাদের প্রভাব ধরে রাখতে চায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জুডিশিয়াল সার্ভিসও নিজেদের পছন্দের লোককে দুদকে বসাতে চায়।

দুদকের ইতিহাস 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্নীতি দমন কমিশন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। চার বছরের মেয়াদ পূরণের আগেই ২০০৭ সালে ‘এক-এগারোর’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পদত্যাগ করেন তিনি।

২০০৭ সালেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় কমিশন। তিনিও মেয়াদ পূরণের আগেই ফিরে যান। এরপর ২০০৯ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক সচিব গোলাম রহমান। মেয়াদ শেষে তিনি ফিরে গেলে ২০১৩ সালে চেয়ারম্যান হন মো. বদিউজ্জামান।

এরপর ২০১৬ সালের মার্চে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব ইকবাল মাহমুদ। ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ শেষে ২০২১ সালের মার্চে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন সাবেক জেলা জজ মো. জহুরুল হক।

এদিকে, ইকবাল মাহমুদের কমিশনের সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের মেয়াদ পূর্ণ হলে গত বছরের জুলাইয়ে সে পদে স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর থেকে ব্যাপক রদবদল দেখে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। দুদকের একাধিক সূত্রের দাবি, গত জুলাইয়ে পদত্যাগ করতে মনস্থির করেন দুই কমিশনার ও চেয়ারম্যান। তবে তারা পদত্যাগ করেননি। 

আরএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *