বর্তমান প্রজন্ম আর ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয় : জামায়াতের আমির

বর্তমান প্রজন্ম আর ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয় : জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে রাজনীতিবিদরা এই স্লোগান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম আর এই ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয়। তারা চায় যে, রাজনীতিবিদদের সফল হতেই হবে। জাতির সঙ্গে দেওয়া সমস্ত কমিটমেন্ট অবশ্যই তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪-এর গণবিপ্লব। এই গণবিপ্লবের চেতনাকে পাস কাটিয়ে আমাদের দল এবং কোনো দল যেন ভিন্নপথে হাঁটার চিন্তা না করে। যারাই হাঁটবেন তাদেরকেই স্বৈরাচারের রাস্তা ধরতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে রাজনীতিবিদরা এই স্লোগান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম আর এই ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয়। তারা চায় যে, রাজনীতিবিদদের সফল হতেই হবে। জাতির সঙ্গে দেওয়া সমস্ত কমিটমেন্ট অবশ্যই তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪-এর গণবিপ্লব। এই গণবিপ্লবের চেতনাকে পাস কাটিয়ে আমাদের দল এবং কোনো দল যেন ভিন্নপথে হাঁটার চিন্তা না করে। যারাই হাঁটবেন তাদেরকেই স্বৈরাচারের রাস্তা ধরতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার দলকে সতর্ক করছি এবং সকল রাজনৈতিক দলকেও সতর্ক করছি। জনগণের চেতনার বিপক্ষে আমরা যেন কেউ না দাঁড়াই। আমাদেরকে অবশ্যই জনগণের পক্ষে শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবি যদি থাকে সেই দাবিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা বা দুঃসাহস আমরা যেন কেউ না দেখাই। কিন্তু হ্যাঁ, যদি জনগণের মধ্য থেকে কোনো একটি বিশেষ মহল জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য, প্রতারণা করার জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসে সেই ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) জামায়াতের আমির গাজীপুর মহানগরীর নগপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গাজীপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত দলের রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জেলা জামায়াতের আমির ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ রোকন সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. সফি উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমির আব্দুল হাকিম ও মাওলানা সেফাউল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আনিসুর রহমান বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নায়েবে আমির খায়রুল হাসান, সেক্রেটারি আবু সাইদ ফারুকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির বলেন, জাতি, ধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশ আমাদের সবার। প্রিয় দেশ শান্তিতে থাকবে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে, প্রতিটি নাগরিক মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বস্তি বোধ করবে। আমরা চাই দেশে-প্রবাসে যারাই আছেন, তারা একজন গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে যেন নিজের পরিচয় সানন্দে প্রকাশ করতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে। যে সমাজে সীমাহীন বৈষম্য থাকবে না এবং মানুষের অধিকারের প্রতি কেউ হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাবে না। যারা দেশ পরিচালনা করবে, তারা হবে নিরেট জনগণের খাদেম। যেদিন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তারা গ্রহণ করবেন, তার আগের দিন পর্যন্ত তার যে সম্পদ ছিল, দেশ পরিচালনা করে তার কার্যকাল সমাপ্ত করার পর, তিনি যখন হিসাব মিলাতে বসবেন, তখন তিনি তার সম্পদের পরিমাণ দায়িত্ব নেওয়ার আগে যা ছিল তারচেয়ে কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে সততার কষ্টিপাথরে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর যদি সকলেই মৎস্য ব্যবসায়ী হয়ে বলে যে আমার মাছের খামার আছে, আমি এমপি হওয়ার আগে আমার দশ টাকা ছিল এখন ৩০০ টাকা হয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে সে একটা ডাকাত। আমরা ডাকাতমুক্ত একটা সমাজ গড়তে চাই। এটি শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য প্রযোজ্য নয়, রাষ্ট্রের যে যেখান থেকে সেবা দেবেন, তাদের সকলের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, আমাদের কলিজার টুকরা এই ছেলেমেয়েদের প্রধান দাবি ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস-আমরা সুবিচার চাই। সুবিচার যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে ডাকাত এবং চোরের কোনো জায়গা নেই। সেখানে সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে ঘুষের রমরমা বাণিজ্য চলবে না।

তিনি বিগত সরকারের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে বলেন, আগের সরকারের মন্ত্রীরা, এমনকি অর্থমন্ত্রী একসময় বলত, ঘুষকে এখন ঘুষ বলা ঠিক হবে না, এটাকে স্পিডমানি বলতে হবে। তারা ঘুষকে এভাবে জাতীয়করণ করেছিলেন ঘোষণা দিয়ে। আরেক মন্ত্রী বলতেন, আমার মন্ত্রণালয়ে ঘুষ খাবেন কিন্তু একটু কম করে নিয়েন।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন বিচিত্র সংসদ এবং সরকার পেয়েছিলাম, সেই সংসদ এবং সরকার জনগণের জন্য ছিল না। সেখানে ব্যক্তি বন্দনায় নেচে গেয়ে জনগণের টাকা নষ্ট করা হত। এক ব্যক্তির ইশারায় সবকিছু উঠত এবং বসত। ইতিহাসে এমন দুর্ধর্ষ শাসক যারা ছিল, স্বৈরশাসক যারা ছিল, তারা বলত আমি হচ্ছি সবচেয়ে বড় রব। তারা আল্লাহকে ভয় করে না, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পায়ে ধরে, হাত জোর করে মানুষের কাছে ক্ষমা চায়, কান্নাকাটি করে চোখের পানি ফেলে। আর যখন ক্ষমতায় যায়, তখন দেশের আপামর মানুষের চোখের পানি ঝরানোর ব্যবস্থা করে। গত ১৫ বছর জাতি বেদনার সঙ্গে সেটাই লক্ষ করেছে।

বিগত আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে জামায়াতের আমির বলেন, প্রবাসীরা লাঞ্ছিত ছিলেন, অধিকার বঞ্চিত ছিলেন। এজন্য জুলাই-আগস্ট শুরু হওয়ার পর আপনারা লক্ষ করেছেন, তারা রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ কারণে স্বৈরশাসকের ভীত কেঁপে উঠেছিল থরথর করে। এজন্য হাতজোড় করে তাদের কাছে মিনতি করে চাওয়া হয়েছে, দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু ধোঁকাবাজদের কথায় তারা (প্রবাসীরা) মোটেও বিচলিত হয়নি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। আবার জালিমের পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ধরে রাখা সমস্ত অর্থ তারা দেশের উন্নয়নের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তাদেরকে মোবারকবাদ।

জাতীয় সংকটে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই যে দেশ-বিদেশে এত মানুষ ত্যাগ ও কোরবানি শিকার করলো, হাজার প্রাণের বিনিময়ে এখন জনগণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। আমরা বলেছি, দল এবং ধর্ম যার যার, দেশ আমাদের সবার। দেশের মৌলিক স্বার্থে দলগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন এই জাতি কামনা করে না। সংকট এসেছে, সংকট আছে, সংকট থাকবে। সকল জাতীয় সংকট ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করবে।

শিহাব খান/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *