‘বন খেকো’দের থাবায় উজাড় হচ্ছে শ্রীপুরে বনবিভাগের সৃজিত বাঁশ বাগান

‘বন খেকো’দের থাবায় উজাড় হচ্ছে শ্রীপুরে বনবিভাগের সৃজিত বাঁশ বাগান

গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ গ্রাম থেকে বিশ একর বনভূমি থেকে অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বন ও সৃজিত বাগানের বাঁশ। আর এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি উজাড় হচ্ছে বনের বাঁশ ও বনাঞ্চল।

গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ গ্রাম থেকে বিশ একর বনভূমি থেকে অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বন ও সৃজিত বাগানের বাঁশ। আর এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি উজাড় হচ্ছে বনের বাঁশ ও বনাঞ্চল।

খবর পেয়ে সাতখামাইরের বিট কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে পৌনে দুইশত বাঁশ উদ্ধার করেছেন।

জানা গেছে, শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ এলাকায় বনভূমিতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন হেক্টর বা ৭ দশমিক ৪৭ একর বাঁশ বাগান করে বনবিভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওই বাগানের পাশেই ফের ৫ হেক্টর বা ১২ দশমিক ৩৫ একর বাঁশ বাগান করে বনবিভাগ। দু’দফায় ১৯ দশমিক ৭৬ একর বনভূমিতে হয় সৃজিত বাঁশ বাগান। এসব বাগানে রোপণ করা হয়েছিল বরাক, মাহাল, রেঙ্গুন, ছিপ মলি ও মলি জাতের বাঁশ। নিয়োগ দেওয়া হয় উপকার ভোগী। গত ১২ বছরে ওই বন ভূমিতে জন্মেছে বিপুল পরিমাণ বাঁশ। পুরো বাগান এলাকায় বনের ভেতর আছে বিভিন্ন জাতের হাজার হাজার বাঁশ। পরিপক্ব বাঁশ বিক্রি করলে সরকারের রাজস্ব আয় হতো, উপকার ভোগীরাও পেতেন টাকা।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শ্রীপুরে জেঁকে বসেছে বন খেকোরা। বনভূমি জবর দখল করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তাদের সেন দৃষ্টি পড়ে বনের বাঁশের ওপর। সম্প্রতি সাতখামাইর বিটের বনাঞ্চলে বনবিভাগ মাইকিং করে জানান দেয় যে, বনের জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ, বনের গাছ বাঁশ কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। যারা এ ধরনের অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে বন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোষাইদ এলাকার বরমী-জৈনাবাজর আঞ্চলিক সড়কের লাগুয়া গভীর গজারি বন। বনের ভেতর দিয়ে গেছে ইট সলিং রাস্তা। সে রাস্তা ধরে এগোলে সামনে মেঠো পথ। পথের পাশেই চোখে পড়ে বাঁশ বনের ক্ষত। রাস্তার পাশে পড়ে আছে বাশের কঞ্চি।

ওই পথ ধরে গিয়ে দেখা যায়, করিরের বাড়ির দু’পাশে বাঁশের স্তূপ। একই দৃশ্য পাশের মফিজুলের বাড়ির পাশেও। তারা বিক্রি বাঁশ কেটে রেখেছেন পাচার করার জন্য। শুধু কবির-মফিজুলই নয়, এর আগে আরও অনেকে ওই বনের বাঁশ অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের মাইকিংয়ের পর থেকে বন খেকোরা বাঁশ বাগানে হামলে পড়েছে। প্রায় প্রতিনিয়ত কেটে নেওয়া হচ্ছে বাঁশ। কিছু অসাধু উপকার ভোগী ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র বনের সম্পদ লুটপাট করছে। বন থেকে কেটে নিচ্ছে শতশত বাঁশ। এর সঙ্গে জড়িতরা প্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, বনের লোকেরাও তাদের কিছু করতে পারবে না। বরং তারা দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে বাঁশ তুলে দেবে।

স্থানীয়রা আরও বলেন, এভাবে বনের বাঁশ লুটপাট এর আগে কখনো দেখিনি। একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতারাতি বন থেকে মূল্যবান বাঁশ কেটে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সাতখামাইরের ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, বন ও বনজ সম্পদ রক্ষার্থে বনকর্মীরা প্রাণান্ত চেষ্টা করে থাকে। প্রায় দেড় মাস আগে বিট বনাঞ্চলে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয় যে, কেউ যেন বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, বন ভূমি দখল, গাছ, বাঁশ কাটার সঙ্গে জড়িত না থাকেন। নতুন করে গড়ে উঠা একটি চক্র বাঁশ কেটেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাঁশ উদ্ধার করতে যাই। স্থানীয় আব্দুল বাতেনের ছেলে মো. জাকির হোসেন রাজু আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। তিনি সব গাড়িকে নিষেধ করে বাঁশ পরিবহণ করতে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে গোসিংগা থেকে গাড়ি এনে সেসব বাঁশ উদ্ধার করা হয়।

শ্রীপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান জানান, বনের ভেতর বাঁশ কাটার খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পাঠাই। সেখান থেকে বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। বনের বাঁশ, গাছ কাটা, জমি দখলের সঙ্গে যারা জড়িত বা বন বিভাগের কাজে যারা বাধা দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *