বাংলাদেশি এক তরুণের বিশ্বকাপে কাজের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশি এক তরুণের বিশ্বকাপে কাজের অভিজ্ঞতা

‘ওহ দারুণ প্রশ্ন’—ভারতকে হারিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোশারফ হোসাইনের প্রশ্নের জবাবে এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার তাহলিয়া ম্যাকগ্রাথ। শুধু এই বিদেশি ক্রিকেটাররই নন, অন্যান্য দেশের সাংবাদিক ও আইসিসি মিডিয়া বিভাগের অফিসাররাদের কাছেও বাংলাদেশি এই তরুণ পেয়েছেন কাজের প্রশংসা। 

বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল এবারের টি টোয়েন্টি নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশ থেকে সরিয়ে বিশ্বকাপ আসরটি নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভিসা জটিলতায় বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচে কাজের সুযোগ হারায় বাংলাদেশের সাংবাদিকরা।

দেশের সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বকাপের সূচি দাঁড়ায় অর্ধেকে। দেশ থেকে যেসব সাংবাদিক ভিসা জটিলতা কাটিয়ে অর্ধেক সূচি নিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তাদের কয়েকজনের একজন মোশারফ হোসাইন। বলা হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে কনিষ্ঠ সাংবাদকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অনার্স পড়ুয়া বাংলাদেশের এই তরুণ। কেমন ছিল তার বিশ্বকাপে কাজ করার অভিজ্ঞতা? সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে জানিয়েছেন ঢাকা পোস্টকে।

মোশারফ হোসাইন বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যাওয়ার পর আইসিসির একজন মিডিয়া অফিসার আমাকে নিতে আসেন। এরপর একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, আমার নামের বানানটা জেনে কম্পিউটার থেকে মুহূর্তে প্রিন্ট করে দেওয়া হয় অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড। আর এই কার্ডই হলো কাজের মূল শক্তি। এরপর সেই মিডিয়া অফিসার আইসিসির পক্ষ থেকে একটি উপহারের ব্যাগ দিয়ে বলেন ‘এটা আপনার জন্য।’ আমার কাছে তখন ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছিল, যেমনটা কোনো ক্রিকেটারের প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলায় হয়।

এরপর তার অফিস কক্ষে কিছুক্ষণ ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করি। সেই অফিসারের কাছে জানতে চাই; প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো আসরে এসেছি, নিয়ম নীতিগুলো জানিয়ে দিলে আমার জন্য কাজ করতে বেশ সুবিধা হবে। এরপর তিনি সকল নীতিমালা জানিয়ে দেন। ওই অনুযায়ী কাজের প্রস্তুতি নিই। 

বিশ্বকাপে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া এই তরুণ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য সময় পেয়েছিলেন দেড় মাসের মতো। এতটুকু সময়ে যতটুকু আয়োজন করেছে তা এককথায় অবিশ্বাস্য। আয়োজন কাঠামো, সাজসজ্জা ও শৃঙ্খলা দেখে মনে হবে না এত কম সময়ে আয়োজন এই বিশ্বকাপের। বিশ্ব আসর আয়োজনের এক-দেড় মাসের মধ্যে সম্ভব করে নিজেদের সম্ভাবনা ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে আমিরাত সরকার। তবে বাংলাদেশ থেকে আসরটি হাত ছাড়া হওয়ায় পস্তাতে হবে হয়ত একদিন। দেশ থেকে বিশ্ব আসর বেরিয়ে যাওয়া, দেশের ভাবমূর্তির ওপর কতটা প্রভাবিত তা বাস্তবমুখী বিশ্লেষণই বলে দেয়।

এবার বিশ্বকাপটা সুখকর হয়নি বাংলাদেশের জন্য, আয়োজনের ব্যর্থতা সাথে যোগ হয় খেলার মাঠের ব্যর্থতা। মাঠের খেলায় ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশকে দ্রুতই ফিরতে হয়েছে। তবে শেষবেলায় নিজেদের ব্যর্থতার কথা শিকার করেছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। মোশারফ হোসাইনের প্রশ্নেই সেদিন অধিনায়ক বলেছিলেন, বোলাররা ভালো করেছে আমরা ব্যাটাররা ভালো করতে পারিনি। আমরা দল অনুযায়ী ফেইল করেছি।

মোশারফ হোসাইন কনিষ্ঠ সাংবাদকর্মী হওয়ায় বিশ্বকাপে নজর কেড়েছেন আলাদাভাবে, বিশেষ করে ভারত-অষ্ট্রেলিয়ার ম্যাচের দিন। সংবাদ সম্মেলনে অষ্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার তাহলিয়া ম্যাকগ্রাথ তার প্রশ্ন শুনে ‘ওহহহ গ্রেট’ কুয়েশ্চন’ বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশি সাংবাদিক জেনে ভারতীয় সাংবাদিক ও আইসিসি মিডিয়া অফিসাররাও প্রশংসা করেন, শুভকামনা জানান। সেদিন আইসিসির তোলা ভারত-অষ্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক ও আইসিসি অফিসারদের সাথে সম্মিলিত ছবিতেও দেখা যায় তাকে।

মোশারফ হোসাইন বলেন, আমার কাছে বিদেশিদের খেলার সংবাদ সংগ্রহ করাটা ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। বিশেষত এই বিশ্বকাপ শেখার একটি মঞ্চ ছিল আমার জন্য। এমন বিশ্ব আসর নতুনদের অনেক কিছু শেখায়, সুযোগ তৈরি করে দেয়। যতটুকু সময় পেয়েছি শিখেছি, সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছি, আশাকরি সামনের দিনে আরো ভালো অভিজ্ঞতায় অগ্রগামী হবো। ক্রীড়া সমৃদ্ধির কাজে এ অভিজ্ঞতা সামনের দিনে কাজে লাগাতে পারবো বলে আশাবাদী।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *