ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-সহিংসতায় চাপের মুখে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে গত জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভ ও তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপে পড়েছিল।
আর এর জেরে সেসময় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প। সোমবার (২১ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের ফলে দেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছিল বলে এই শিল্পের নেতারা জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি এখন “স্থিতিশীল” বলে জোর দিয়ে জানিয়েছেন তারা।
দক্ষিণ এশীয় এই দেশটির বার্ষিক রপ্তানির ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে ৩৫০০টি পোশাক কারখানা থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের এই শিল্পে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।
এএফপি বলছে, কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, কিন্তু এরপরও পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের চাকরি ও ভালো বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
এ ধরনের বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নেয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন গার্মেন্টস কর্মী নিহত ও আরও ২০ জন আহত হন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার রোববার বলেছেন, কারখানার মালিক ও সরকারের “মনোভাবে ব্যাপক পরিবর্তন” আনতে হবে। তিনি বলেন, “শ্রমিকরা রাস্তায় নামলেই বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়”।
তিনি বলেন, “এই সেক্টরে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য” পরিবর্তন প্রয়োজন, “অন্যথায়, শান্ত পরিস্থিতি স্থায়ী নাও হতে পারে”।
এএফপি বলছে, বাংলাদেশ চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং লেভিস, জারা এবং এইচএন্ডএম-সহ বিশ্বের অনেক শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকেই তাদের পোশাক সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করে বর্তমানে এই শিল্পটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে”।
গত শনিবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি গত আগস্ট থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আনুমানিক ক্ষতির কথা জানান এবং বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে এই শিল্প রক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “ফ্যাক্টরি রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে এবং তারা গার্মেন্ট হাবগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত টহল চালাচ্ছেন। ক্রেতারা বাংলাদেশি পোশাকের প্রতি তাদের আস্থা ফিরে পেয়েছে, তবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা নিরবচ্ছিন্ন থাকা অপরিহার্য।”
টিএম