চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবি

চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবি

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চাকরিচ্যুত ৩১ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালসহ আরইবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চাকরিচ্যুত ৩১ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালসহ আরইবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঢাকা-১ জোনের জুনিয়র টেকনিশিয়ান তামজিদুল ইসলাম, নরসিংদী-১ জোনের ডিজিএম (টেকনিক্যাল) আবদুল্লাহ আল হাদী, নরসিংদী-২ এর জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার শায়ীদুল ইসলাম ভুইয়া প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতের সেবা মূলত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক সব লাইন নির্মাণ এবং মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবচেয়ে বড় কাজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন সংযোগ প্রদান এবং অভিযোগ সমাধান করা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অন্য বিতরণ সংস্থার থেকে অতি নিম্নমানের মালামাল দিয়ে লাইন নির্মাণ এবং নিম্নমানের মিটার, ট্রান্সফরমার, তারসহ অন্য ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। যার কারণে আকাশে মেঘ উঠলেই পল্লী বিদ্যুতের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ঝড় বাদলে খুঁটি ভেঙে দিনের পর দিন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ভুক্তভোগী হয় সাধারণ গ্রাহক এবং গ্রাহক পর্যায়ে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

‘কিন্তু আজ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায়, এই সিস্টেমের সংস্কার দাবি করায়, শহর এবং গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনের দাবি তোলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সবাই নিরাপত্তার জন্য স্টেশন ত্যাগ করলে তখন বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কে নেবে?’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রাহকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা কিংবা জবাবদিহিতা না থাকায় আরইবি সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় করে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সমিতির কাছে হস্তান্তর করায় গ্রাহক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়া, ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে সমিতিগুলোকে শোষণ করা, সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের হেয়প্রতিপন্ন ও হয়রানি করা, আরইবির ব্যর্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর ওপর চাপানো, আরইবির ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দীর্ঘকালে সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করায় গত জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর শুধু স্মারকলিপি পাঠানোর জন্য দুইজন এজিএমকে সাসপেন্ড এবং কয়েকজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। অথচ যশোর-১ এর জিএম ইসাহাক আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কর্মীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে প্রাইজ পোস্টিং প্রদান করে। গত মে মাসে গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাঁচ দিন কর্মবিরতি পালন করে। জুলাই মাসেও গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে ১০ দিন কর্মবিরতি পালন করে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংস্কার কমিটি গঠন করা হলেও বোর্ড সেখানে জানায় তারা সংস্কার চায় না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই কোনোরকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত ১৭ অক্টোবর ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয় এবং ১৮ জনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। যে কারণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সেবা বিঘ্নিত হয়; যার জন্য আমরা গ্রাহক সাধারণের নিকট ক্ষমা প্রার্থী।’

১৪ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ বঞ্চনা নিরসন, পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি, টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সমিতিতে কর্মরত ৪৫ হাজার মানুষের বৈষম্য ও হয়রানি নিরসন, আত্মমর্যাদা এবং আত্মসম্মানের বিষয়ে টেকসই সমাধানের জন্য চার দফা দাবি তুলে ধরেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

১. আরইবি কর্তৃক সৃষ্ট অস্থিতিশীল পল্লী বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত ২ জনকে পদায়ন করা।

২. গ্রাহকের নিকট জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সমিতি ও বোর্ড সংস্কার করে একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করা ও স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তি ভিত্তিকদের নিয়মিত করা।

৩. ছাত্র সমন্বয়কসহ স্বাধীন কমিশন গঠন করে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা।

৪. আরইবির দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা।

ওএফএ/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *