লালন মেলার প্রথম দিনে ভক্তদের ঢল

লালন মেলার প্রথম দিনে ভক্তদের ঢল

কুষ্টিয়ায় লালন মেলায় প্রথম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষের মিলন মেলায়। 

কুষ্টিয়ায় লালন মেলায় প্রথম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষের মিলন মেলায়। 

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই মেলার বিভিন্ন স্টল থেকে কেনাকাটা করেছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত-অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা শুরু হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আলোচনা সভা শেষে  সঙ্গীত অনুষ্ঠান শুরু হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন অ্যাকাডেমির আয়োজনে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত লালন মেলা চলবে। লালন মেলায় অনুষ্ঠানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আলোচনা সভা হবে। আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যেখানে গাইবেন লালন অ্যাকাডেমির শিল্পী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন অ্যাকাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালন মেলা উপলক্ষ্যে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার লালন ভক্ত-অনুসারীরা এসেছেন। প্রতিনিয়ত লালন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। লালন মেলায় আখড়াবাড়িতে ভক্ত অনুসারীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ভক্ত-অনুসারীরা খণ্ডখণ্ডভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। লালনের বাণী ও আদর্শ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। লালনের গানে গানে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভক্ত অনুসারীরা লালন ফকিরের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে তৈরি করেছেন আস্তানা। লালন মেলায় কালি নদীর পাড়ে মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আশপাশের এলাকায়ও হরেকরকমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন মেলা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত। এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসছেন। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন মুখরিত এই এলাকা। মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তী সময়ে লালন মেলার আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত এ উৎসব পালন করা হয়। সাঁইজির স্মরণে দিবসটি ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান হয় আখড়াবাড়িতে। 

লালন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বলেন, লালন মেলায় দূরদূরান্ত থেকে ভক্ত অনুসারীরা আসছেন। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। লালন ভক্ত ও অনুসারীদের আস্তানাগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। তাদের গাওয়া গান শুনতে ভালো লাগে। জায়গায় জায়গায় তারা গান গাচ্ছেন। লালন সাঁইজির গানে ও বাণীতে এই এলাকার মুখরিত হয়ে উঠেছে। চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। মানুষের ভিড় ঠেলে লালন মেলায় ঘুরতে হচ্ছে।

লালন অ্যাকাডেমির কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয়রা বলেন, লালন ফকির দীর্ঘ সময় ধরে তার নিজস্ব আত্মদর্শনের আলোকে ভক্ত আশেকান ও শিষ্যদের নিয়ে যেসব উৎসবমুখর কর্মকাণ্ড করতেন তারই ধারাবাহিকতায় পহেলা কার্তিক সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্তশিষ্য-অনুসারীরা ছেঁউড়িয়ার আঁখড়াবাড়িতে মিলিত হন।

তারা আরও বলেন, সাধারণত লালন মেলায় লাখ লাখ ভক্ত-অনুসারী, সাধু-ফকির ও দর্শনার্থীদের ভিড় হয়। কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাহিরে যেন পা ফেলার জায়গা থাকে না। এবারও লালন মেলা প্রথম দিনেই দূরদূরান্ত থেকে হাজারো ভক্তরা এসেছেন। সাধু ভক্তদের এই মিলন মেলায় লালনের রেখে যাওয়া মানবমুক্তির আধ্যাত্মিক বাণী সম্বলিত গান গাওয়া হয়। লালন শাহের গান শুনতে ও এখানে ঘুরতে জড়ো হচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থীরা।

এসব বিষয়ে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও লালন অ্যাকাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আলোচনা সভা শুরু হবে, আলোচনা শেষে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। মেলার সার্বিক কার্যক্রম চলছে। মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।

রাজু আহমেদ/পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *