দেশে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১২ অক্টোবর চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ নয়জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। ওই দিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১২ অক্টোবর চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ নয়জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। ওই দিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মশাবাহিত এ রোগে ঔষধি প্রতিকারের চেয়ে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ায় বেশি জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে পেঁপে, ডাব, মাল্টা, আঙুর-আপেলের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু ফল খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, ডেঙ্গুর মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় এসব ফলের দাম বেশি রাখছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে হাসপাতালের আশপাশের ফলের দোকানে দামের দাপট বেশি দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিনে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনের ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরন ভেদে বিদেশি মাল্টার দাম কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য ফল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধী ফল পেঁপে ও ডাব আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে, দেশি মাল্টার চাহিদা কম থাকায় এটির দাম বাড়েনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজারে চায়না কমলার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি মাল্টা। তবে, দেশি কমলা বাজারে আসতে শুরু করলে বিদেশি কমলা ও মাল্টার দাম আরও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন ফল বিক্রেতারা।
ডাব
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনের বেশিরভাগ ফলের দোকানেই ডাব মেলেনি। তবে, ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছিলেন কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে দাম চাচ্ছিলেন তারা।
সামাদ নামের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রতিদিন এখানে ৫০ থেকে ৬০টা ডাব বিক্রি করি। আমার কাছে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪০ টাকার মধ্যে ডাব আছে। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের রোগীদের স্বজনেরা ডাব নিয়ে যায়। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডাব বেশি বিক্রি হচ্ছে।
খোকন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ডাব বিক্রি করছি। একটু ছোট সাইজের ডাবের দাম কম। গত এক সপ্তাহে ডাবের দাম বাড়েনি। কারণ, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডাব পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের রোগীদের কাছে বেশি ডাব বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।
পেঁপে
এখন সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা-পাকা পেঁপে। কাঁচা পেঁপে সবজি এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। ভরা মৌসুম হলেও কিছুটা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে এটি।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পাশের গলির ফল ব্যবসায়ী মোরশেদ বলেন, এখন পেঁপের চাহিদা অনেক বেশি। হাসপাতালে ডেঙ্গুর রোগী বেড়ে যাওয়ায় পেঁপে বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি পাকা পেঁপে বিক্রি করছি।
তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে পেঁপের দাম বাড়েনি। আগের দামেই অর্থাৎ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
মাল্টা
বছরজুড়ে ফলের বাজারে আলাদা কদর থাকে মাল্টার। বিদেশি এ ফল বর্তমানে দেশের মাটিতেও চাষ হচ্ছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালে রয়েছে দেশি মাল্টা। তবে, দেশি মাল্টার তুলনায় আমদানি করা মাল্টার দাম তিন গুণ বেশি। আমদানি করা মাল্টার চাহিদাও বেশি বলে জানান ফল ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনের ফল ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, বিদেশি মাল্টা ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, দেশি মাল্টা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তারপরও মানুষ দেশি মাল্টার চেয়ে বিদেশি মাল্টা বেশি কেনেন। দেশি মাল্টা মিষ্টি হলেও বিদেশি মাল্টা টক-মিষ্টি।
আনার
বর্তমানে ফলের বাজারে রাজত্ব করছে আনার। আমদানি করা এ ফল ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের রোগীর প্রথম পছন্দ আনার। তবে, দামের কারণে নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির বাইরে এ ফল তেমন কেউ কেনেন না।
ফল ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ফলের মধ্যে আনারের দাম সবচেয়ে বেশি। এ ফল ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রিও কম। বড় লোকেরা ছাড়া কেউ কিনতে চান না। আবার কেউ নিলেও একটা বা দুইটা নেয়।
আপেল, আঙুর ও ড্রাগন
বছরব্যাপী যে কয়টি ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে আপেল ও আঙুর অন্যতম। সেই সঙ্গে দেশি ফল হিসেবে ড্রাগনও পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। জাত ভেদে আপেল ও আঙুরের দামে ভিন্নতা রয়েছে। তবে, ড্রাগনের দামে তেমন ভিন্নতা নেই। রোগীদের কাছে ফলগুলোরও বেশ কদর রয়েছে। তবে, আমদানি নির্ভর হওয়ায় আপেল, আঙুরের মতো ফলের দাম বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ী সোহেল জানান, সবুজ আপেল ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। লাল আপেল ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আর বড় জাতের লাল আঙুর ৪০০ টাকা ও সবুজ আঙুর ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ড্রাগন ২২০ টাকা এবং নাশপাতি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রতন নামের এক ক্রেতা বলেন, আমার মামা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডাক্তারের পরামর্শে ডাব, মাল্টা ও পেঁপে খাওয়াতে হচ্ছে। ছোট ছোট ডাবের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা নিচ্ছে। বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া পাকা পেঁপে ৮০ টাকা কেজিতে কিনেছি।
পেঁপের দাম যথেষ্ট মনে হলেও দেশি মাল্টার তুলনায় বিদেশি মাল্টার দাম বেশ বেশি বলে মনে হয়েছে রতনের কাছে। এজন্য তিনি ৮০ টাকা কেজিতে দেশি মাল্টা কিনেছেন বলে জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শনিবার (১২ অক্টোবর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। একইসঙ্গে এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯১৫ জন। হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১০০ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৫৬ জন, খুলনা বিভাগে ৯৭ জন রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৫ জন, রংপুর বিভাগে নয়জন এবং সিলেট বিভাগে চারজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪১ হাজার ৮১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২১০ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন।
এসআর/এসএসএইচ