রতন টাটার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারত, শোকপ্রকাশ মোদি-রাহুল গান্ধীর

রতন টাটার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারত, শোকপ্রকাশ মোদি-রাহুল গান্ধীর

শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার (৯ অক্টোবর) গভীর রাতে দেশটির মহরাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রতন টাটা।

শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার (৯ অক্টোবর) গভীর রাতে দেশটির মহরাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রতন টাটা।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রতন টাটা একজন দূরদর্শী মানুষ ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এছাড়া শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীও।

মৃত্যুকালে রতন টাটার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। এজন্য নিয়মিত চেকআপেও থাকতে হতো তাকে। জানা গিয়েছিল, হেলথ চেকআপের জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন রতন টাটা।

কিন্তু বুধবার বিকেলে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে, রতন টাটা শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিকভাবে শোনা গিয়েছিল, হঠাৎ রক্তচাপ নেমে যাওয়ায় কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষে বুধবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে নিজের অ্যাকাউন্টে রতন টাটার সঙ্গে ছবি পোস্ট করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি লিখেছেন, রতন টাটা একজন দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তার নম্রতা এবং আমাদের সমাজের উন্নতিতে তার ভূমিকার জন্য রতন টাটাকে মনে রাখবে সবাই।

রতন টাটার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, “রতন টাটা ছিলেন ভারতীয় শিল্পের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত।”

শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধীও। ভারতের এই বিরোধীদলীয় নেতা লিখেছেন, “ব্যবসার জগতে এক ছাপ ফেলেছেন তিনি।”

অন্যদিকে রতন টাটার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতীয় শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রাও। তিনি লিখেছেন, “রতন টাটার অনুপস্থিতি আমি মেনে নিতে পারছি না। ভারতের অর্থনীতি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেই অবস্থান ধরে রাখতে অনেক অবদান রেখেছেন রতন টাটা।”

প্রসঙ্গত, ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরাটে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান।

মুম্বাই, শিমলা হয়ে নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান রতন টাটা। ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সাতের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।

যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাটে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা।

এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হয়েছিলেন রতন টাটা।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *