মধুসূদনের ‘শহরে’ রাজার বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ

মধুসূদনের ‘শহরে’ রাজার বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ

অলিম্পিক গেমস মানেই ব্যস্ততা। সকাল থেকে রাত অবধি চলে খেলা। বাংলাদেশ ফ্রান্সের চেয়ে ঘণ্টা চারেক পিছিয়ে থাকায় প্যারিসে অলিম্পিক কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ আরও একটু বেশি। 

অলিম্পিক গেমস মানেই ব্যস্ততা। সকাল থেকে রাত অবধি চলে খেলা। বাংলাদেশ ফ্রান্সের চেয়ে ঘণ্টা চারেক পিছিয়ে থাকায় প্যারিসে অলিম্পিক কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ আরও একটু বেশি। 

সপ্তাহ দু’য়েক প্যারিস থাকলেও ফ্রান্স দর্শনের সুযোগ হয়নি একেবারেই। প্রেস সেন্টার-ভেন্যু আর মাটির নিচে নামতে-উঠতেই (মেট্রোরেল) কেটেছে দিন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে একটু ফুসরত পাওয়ায় মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বন্ধু মুকুট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিডিয়েট সিনিয়র মানিক ভাইয়ের সঙ্গে প্যারিস দর্শনের বন্দোবস্ত হল। 

প্যারিস স্থানীয় সময় বিকেল ৭টায় ভ্রমণ শুরুর কথা থাকলেও নানা ব্যস্ততায় ৮টা বাজল। প্যারিসে সন্ধ্যা নামে সাড়ে ৯টার পর। হাতে আরও দেড়ঘণ্টা দিনের আলো রয়েছে। তাই বন্ধু মুকুটের সিদ্ধান্ত প্যারিসের নিকটবর্তী ভার্সেই শহরে ভ্রমণ। 

ফ্রান্সের ভার্সেই শহর বিশ্বের মধ্যে বেশ আলোচিত-বিখ্যাত। বাংলাদেশের মানুষের মনে এই শহরের বিশেষ জায়গা রয়েছে। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই শহরে থাকতেন। এই শহরে থেকেই বাংলাদেশকে মনে পড়ে স্মৃতিবিজড়িত কবিতা লিখেছেন মাইকেল। আবার এই শহরেই তার কষ্টের দিন কেটেছে। তাই ফ্রান্সের ভার্সেই শহরের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘকাল থেকেই পরিচিত।

প্যারিস থেকে ভার্সেইয়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়। ২০-৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী প্যারিস ছেড়ে ভার্সেইয়ে ঢুকতেই দুই শহরের পার্থক্য চোখে পড়ল। প্যারিসে গাড়ির জটলা, পরিবেশে একটু গুমোট ভাব আর মানুষদের সার্বক্ষণিক ছুটে চলার প্রবণতা। ভার্সেইয়ে একেবারে নির্মল পরিবেশ, চারদিকে সুন্দর ছোট-বড় গাছ। মানুষের ভিড়ও কম। কয়েক কিলোমিটার পথ চলায় কোথাও নোংরা-অপরিচ্ছন্নতা চোখে পড়েনি। 

প্যারিসের ভিড় ঠেলে ভার্সেইয়ের দিকে যত ভেতরে যাওয়া হয়, সবখানেই একই চিত্র। প্যারিস রাজধানী হলেও ভার্সেইয়ের জীবনযাত্রার মান একটু উন্নত। প্যারিসের চেয়েও ভার্সেই আবাসিক ব্যয়-ট্যাক্সের পরিমাণও বেশি। রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে অধিক কর নিলেও, এর বিপরীতে সেবার মানও একই রকম। 

ফ্রান্স এখন বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হলেও এক সময় ছিল রাজার শাসন। রাজা লুইদের বাড়ি ছিল ভার্সেইতে। শিল্প-সংস্কৃতির দেশ ফ্রান্স ইতিহাসও সংরক্ষণ করে। রাজার বাড়িতে তৈরি জাদুঘর দেখতে আসেন সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। আমরা যখন রাজার বাড়ির সামনে তখন ঘড়ির কাটা ঘুরছে প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে। সূর্যের আলো নিভু নিভু করলেও জাদুঘরের দরজা বন্ধ হয়েছে আগেই। সন্ধ্যা নামার আগেই আলো জ্বলছে ভেতরে। খানিকটা দূরে থাকলেও সেই আলোয় আভিজাত্যের ছোঁয়া পাওয়া গেল।

জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশে ইউরোমূল্য রয়েছে। তবে জাদুঘরের বাইরেও সুন্দর দৃশ্য। সামনে বড় আঙিনায় দাঁড়িয়ে জাদুঘরের বিশালতা-ইতিহাসের ভান্ডার সম্পর্কে আঁচ করা যায়। মূল ফটকের সামনে দাড়িয়ে অনেক পর্যটক-ইতিহাসপ্রেমীরা ছবি তুলছেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৯টা হলেও পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। স্কুলের বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইয়ের ভাষ্য– রাজার প্রাসাদের সামনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। প্যারিস শহরের চেয়ে ভার্সেইয়ে যান্ত্রিকতা কমই চোখে পড়েছে ঘণ্টা খানেকের অবস্থানে। নিস্তব্ধ শহরের মতো এখানকার মানুষও কিছুটা নীরব এবং যারা আসেন তারাও প্রকৃতি ও শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন।

রাজার বাড়ির ফটকের সামনের আঙিনায় আলাপ করতে করতে সূর্যের আলো নিভে গেল। সময়ের স্বল্পতায় বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি মধুসূদন দত্তের বাড়ি আর যাওয়া হলো না। গেমসের ব্যস্ততায় আবার এই শহরে আসার সম্ভাবনাও নেই। মধুসূদনের বাড়ি দেখা না হলেও তার শহরের কিছু অংশে অন্তত ভ্রমণ হয়েছে। ততটুকুই লেগেছে ছবির মতো। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় আগে এই ছবির শহরে থেকেও বাংলার টানে মুগ্ধ ছিলেন মধুসূদন।

ভার্সেই শহর থেকে রাত ১১টার দিকে আবার প্যারিসে ফেরা। মাত্র ঘণ্টা দেড়েক থাকলেও সেখানকার মুগ্ধতার রেশ রয়ে গেছে। তাই তো ফরাসি ও প্রবাসী অনেকেই সময় পেলে ছুটে যান ঐতিহাসিক শহরটিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী চুক্তিও হয়েছিল এই ভার্সেইয়ের নামেই। 

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *