নিখোঁজ জেলের সন্ধান মেলেনি ১০ দিনেও, বৃদ্ধ মা-বাবার আহাজারি

নিখোঁজ জেলের সন্ধান মেলেনি ১০ দিনেও, বৃদ্ধ মা-বাবার আহাজারি

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলারডুবিতে হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নিখোঁজ জেলে রহিম উদ্দিনের ১০ দিনেও মেলেনি সন্ধান। বাড়িতে চলছে বৃদ্ধ মা-বাবার আহাজারি। বাবার ফেরার পথ চেয়ে আছে শিশু ইসমাইল।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলারডুবিতে হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নিখোঁজ জেলে রহিম উদ্দিনের ১০ দিনেও মেলেনি সন্ধান। বাড়িতে চলছে বৃদ্ধ মা-বাবার আহাজারি। বাবার ফেরার পথ চেয়ে আছে শিশু ইসমাইল।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা মাটি দেওয়ার জন্য মরদেহ পেয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জেলে মো. রহিম উদ্দিন হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোল্লা গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন ও সামছুন নাহার দম্পতির ছেলে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি পাঁচ নম্বর।

জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় মেহেরাজ মাঝির ট্রলার ডুবে যায়। দুই দিন পর ১৫ জনের জেলের মধ্যে ১৪ জন উদ্ধার হলেও দীর্ঘ ১০ দিন ধরে নিখোঁজ রহিম উদ্দিন। এক সন্তানের জনক রহিম উদ্দিন বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও রেখে গেছেন একমাত্র ছেলে ইসমাইল ও গর্ভবতী স্ত্রীকে। 

রহিম উদ্দিনের বাবা বৃদ্ধ মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০ দিন ধরে আমার ছেলের কোনো খোঁজ নাই। বাড়িতে তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। একমাত্র ছেলে ইসমাইল বাবা বাবা বলে কান্না করছে। আমার বয়স হয়েছে। এত চিন্তা নিতে পারি না। সরকার যদি আমার ছেলের মরদেহটা উদ্ধার করে দিতো, তাহলে মাটি দিতে পারতাম। একটা নিশানা থাকতো কবরের। এখন তো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।

রহিম উদ্দিনের মা সামছুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কত ঋণ, কত চাপ। মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। ছেলেরা নদীতে সাগরে মাছ ধরে সংসার চালায়। তাদের মরদেহটাও আমরা পাই না। ১০ মাস গর্ভে ধরছি যারে, সেই ছেলের মুখটা দেখি না। এতদিন নদীতে ভেসে বেঁচে থাকা কঠিন। সরকার অন্তত মরদেহ দেখার ব্যবস্থা করে দিক।

রহিম উদ্দিনের ভাই মো. শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাগরে মরদেহটা ভাসলেও অন্যরা হয়তো উদ্ধার করছে না। দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসে। জেলেরা মরদেহ উঠাতে ভয় পায়। তাদের জালে মরদেহ মিললে তারা ভাসিয়ে দেয়। কারণ কূলে নিয়ে আসলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের জড়িয়ে নানা রকম কথাবার্তা হয়।

হাতিয়ার মৎস্য ব্যবসায়ী লুৎফুল্লাহিল নিশান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের জেলে রহিম উদ্দিনসহ হাতিয়া উপজেলায় এখনো দুইজন নিখোঁজ আছেন। নিখোঁজের ১০ দিন হলেও এখনো কারও কোনো সন্ধান মেলেনি। প্রশাসনের কাছে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজে তল্লাশি চালানোর দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিল্টন চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে মেঘনা নদীতে নিখোঁজ দুই জেলের মরদেহ উদ্ধারের জন্য আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিলাম। কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। মরদেহ পেলে সরকারিভাবে যেই সহযোগিতা করা যেতো, মরদেহ না পেলে সেটা করা সম্ভব না। আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি, কোথাও খবর পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হাসিব আল আমিন/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *