আমিরাত থেকে ফেরা প্রবাসীদের কর্মসংস্থান করে দিন

আমিরাত থেকে ফেরা প্রবাসীদের কর্মসংস্থান করে দিন

আব্দুল্লাহ আল শাহীন

এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে দেশের যেকোনো ক্লান্তিলগ্নে প্রবাসীরা পাশে থাকে। দেশ ভালো থাকলে ভালো থাকে প্রবাসী, অনুরূপ দেশ কষ্টে থাকলে কাঁদে দূর প্রবাসী। গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ হিসেবে জন্মলগ্ন থেকে আমরা সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করি। তবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ ও দেশের মানুষ। আমরা যেমন ছোট ছোট বিষয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ি, আবার বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে জানি।

জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে মানবতাবিরোধী অপশক্তি, ফ্যাসিস্ট রেজিম ঢাকাসহ পুরো দেশে গণহত্যা চালায়। তখন সেই আন্দোলন আর দেশে স্থির থাকেনি। শিশু-কিশোর, ছাত্র, দিনমজুর, পেশাজীবী, সাংবাদিকদের লাশের মিছিল দেখে মুহূর্তে আন্দোলনের উল্কা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি, কলকাতা, করাচি, তেহরান, বাগদাদ, রিয়াদ, আবুধাবি, দুবাই, দোহা, নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ বিশ্বের বড় বড় শহরে। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে রাস্তায় নামেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। ইউরোপ-আমেরিকায় বিদেশিরাও আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আইনে আন্দোলন বা মিছিল-মিটিং বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। আরও একটু সহজে বললে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত হয়। এসব দেশের আইন অত্যন্ত কঠিন ও কার্যকরী। যখনই কোনো আইন লঙ্ঘন হয় সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। যেকোনো দেশে অবস্থান করলে সেই দেশের আইন মেনে চলাটা খুবই জরুরি ও বাধ্যতামূলক। এত কঠিন আইনের মধ্যে থেকেও মিছিল করেন প্রবাসীরা। ১৯ জুলাইয়ের মিছিল-পরবর্তী আমিরাতের খবর সবারই জানা। গ্রেপ্তার হন অসংখ্য প্রবাসী, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় অনেকের।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধ ও কূটনৈতিক তৎপরতায় আমিরাতের জেল থেকে নতুন বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেছেন মিছিলকারী সেসব প্রবাসীরা। চাকরি, ব্যবসা সব ছেড়ে একদম খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। অনেকের পরিবার আমিরাতে অবস্থান করছেন বলেও জানা যায়। এদের মধ্যে বহু সংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন যারা স্বল্প বেতনের চাকরি করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বিদেশের আইন লঙ্ঘন হয়েছে। সাজা হয়েছে, শাস্তিও হয়েছে। এখন কি হবে? কীভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নেবে? কেন তাদের এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো? কার জন্য এমন হলো? এসব বিষয়ে রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভাবতে হবে।

রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসীদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়টি তো বলাই বাহুল্য। যখন দেশে নির্বিচারে মানুষকে হতাহত করা হচ্ছে, বাচ্চারা রাস্তায় মারা যাচ্ছে, প্রবাসী বাবার সন্তান প্রাণ দিচ্ছে, যখন প্রবাসী ভাইয়ের বোনকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও পেটোয়া বাহিনী আঘাত করছে তখন সেই বাবা ও ভাইয়েরা নিজের দিকে খেয়াল করেননি। বাস্তবতা হচ্ছে সন্তানকে বাঁচাতে প্রতিবন্ধী বাবাও চাইবে জালিমকে আঘাত কর‍তে। ঘটনাটি মূলত এমনই হয়েছে। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থামাতে তারা আইনের বাইরে গিয়ে মিছিল করেন। প্রতিবাদের ক্ষেত্র তৈরি করায় এর দায় একমাত্র শেখ হাসিনা ও তার গুন্ডা-পান্ডাদের। অর্থনৈতিক ও মানসিক যে ক্ষতি হয়েছে তা স্বৈরাচার সরকারের বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও লাঘবের উদ্যোগ নিতে হবে। আমিরাতে আটকের পর দেশে ফেরত যাওয়া প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কর্মসংস্থান করে দেওয়া মানবিকও বটে।

আমরা যে দেশেই থাকি না কেন, অবশ্যই সেই দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যতই সমস্যা হোক না কেন নিজেদের সংযত রাখতে হবে। আইন লঙ্ঘন করলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। আইন মানার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ বন্ধ না হয়ে আরও সুগম হোক। আমরা আমাদের আচরণ ও নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকার মান বজায় রাখব। আমাদের ব্যক্তিগত অপরাধ বা ব্যক্তির ত্রুটি পুরো দেশের পরিচিতি বহন করবে, কারণ প্রবাসীরা একেকজন অলিখিত অ্যাম্বাসেডর।

আব্দুল্লাহ আল শাহীনযুগ্ম সম্পাদকবাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই

ঢাকা পোস্ট প্রবাস বিভাগে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *