বন্যায় ঘেরের ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে পাগলপ্রায় আলী মিয়া

বন্যায় ঘেরের ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে পাগলপ্রায় আলী মিয়া

২০০০ সাল থেকে স্বপ্ন বুনছেন নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর আলী মিয়া। পেয়েছেন সফলতাও। ১২ শতক জমি বিক্রি করে দিঘি লিজ নিয়ে করেন মাছের ঘের। ধীরে ধীরে তা বড় হতে হতে ৪২ একরে তার আলী অ্যাগ্রো ফার্মের পথচলা। মাছ, মুরগি, গরু ও হাঁসের ব্যবসা থেকে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন। তবে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন আলী মিয়া। বন্যায় ঘেরের দুই কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়।

২০০০ সাল থেকে স্বপ্ন বুনছেন নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর আলী মিয়া। পেয়েছেন সফলতাও। ১২ শতক জমি বিক্রি করে দিঘি লিজ নিয়ে করেন মাছের ঘের। ধীরে ধীরে তা বড় হতে হতে ৪২ একরে তার আলী অ্যাগ্রো ফার্মের পথচলা। মাছ, মুরগি, গরু ও হাঁসের ব্যবসা থেকে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন। তবে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন আলী মিয়া। বন্যায় ঘেরের দুই কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়।

আলী মিয়া সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া গ্রামের সওদাগর বাড়ির আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী দেওটি ইউনিয়নের পালপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়া জমিতে গড়ে তোলেন আলী অ্যাগ্রো ফার্ম।

আলী মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার দীঘি ও প্রজেক্টে প্রায় পাঁচ লাখ পিস মাছ ছিল। বড় মাছের ওজন তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি। যখন বন্যা শুরু হয় আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু লাভ হয় নাই। আমি দেখছি চারপাশ ডুবে গিয়ে সব মাছে ভেসে যাচ্ছে। আমি জাল দিছি, নেট দিছি, কিন্তু কোনো মাছ রাখতে পারি নাই। এখন রাত হলে ঘুম হয় না, স্বপ্নে দেখি আমার সব মাছ চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে দিঘি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। আমার এখানে, গরু, মুরগি, হাঁস ও দেশিয় জাতের মাছ ছিল। ১২ জন মানুষ আমার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। মাছ ধরলে আমি সবাইকে মাছ দিতাম… টাকা কম আর বেশি। কাউকে খালি হাতে ফেরত দেই নাই। আজ আমি নিজেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন আমি পাগলপ্রায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘৪২ একরের ঘেরগুলোতে আমি প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকার মাছের খাবার দিতাম। আমি সব কাজ বাদ দিয়ে মাছের খাবার দিতাম। আমি পেরেশান থাকতাম তাদের খাবার দেওয়ার জন্য। ঘরের কাজ ঠিকমতো করি নাই মাছের জন্য সময় দিতে গিয়ে। ছেলেমেয়ে এখন বকতেসে৷ তারা বলে সব টাকা আমি পানিতে ভাসাই দিছি। এখন নিজেকেও বুঝ দিতে পারি না। আল্লাহ কী দুর্যোগ দিলো!’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আলী মিয়াসহ অনেকেই ঋণ নিয়ে বা উদ্যোক্তা হতে মাছের খামার বা ঘের করেছেন। তারা স্বপ্ন দেখেছেন বেকারত্ব ঘোচাবেন। কিন্তু এমনভাবে প্লাবিত হয়েছে যে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় নাই।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আলী ভাই দীর্ঘদিন ধরে দীঘি ও প্রজেক্টে মাছ চাষ করেন। মিয়ার কেবল মাছ নয়, গরু ছাগল ও হাঁস-মুরগি মিলে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার মতো বড় কেউ আর আমাদের এই অঞ্চলে নাই। তাকে দেখে অনেকে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তার এমন ক্ষতিতে আমরাও মর্মাহত।’

সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কানিজ ফাতিমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষ ২০০৪ সালের পর এবার বন্যা দেখেছে। তবে, অতীতে এমন ভয়াবহ বন্যা তারা দেখেনি৷ বন্যায় সোনাইমুড়ী উপজেলার মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আলী মিয়াসহ অসংখ্য মৎস্য খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা সবার তথ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জানাব। আশা করি সরকার এসব খামারিদের পাশে দাঁড়াবেন। তাহলে এসব উদ্যোক্তা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় নোয়াখালীর আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভায় ৮৫ হাজার ৩৭৯টি খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত খামার ও কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

হাসিব আল আমিন/কেএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *