জয়পুরহাটে সংঘর্ষে যুবক নিহত, স্থানীয় এমপিসহ আহত শতাধিক

জয়পুরহাটে সংঘর্ষে যুবক নিহত, স্থানীয় এমপিসহ আহত শতাধিক

জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জেলা শহর। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিশাল সরকার (১৮) নামের একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর আহত হয়েছেন শতাধিক।

জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জেলা শহর। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিশাল সরকার (১৮) নামের একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর আহত হয়েছেন শতাধিক।

জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এতে সাংবাদিক,  আন্দোলনকারীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৮টা) থমথমে রয়েছে জেলা শহর। এর আগে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা নতুনহাটে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে তারা অসহযোগ আন্দোলনের মিছিল বের করে প্রধান সড়ক হয়ে জিরো পয়েন্ট যান। সেখানে দুপুর ১২টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরের নতুনহাটে এসে জড়ো হন। ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বাটার মোড়ে আসেন। সেখানে আগে থেকে জড়ো হয়ে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেন। সেখান থেকে তারা মিছিলটি নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট-পাঁচুরমোড় আসেন। এ সময় চিত্রারোড কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। পুলিশ ওই সড়কে ব্যারিকেট দেয়। এ সময় দলীয় কার্যালয় থেকে কিছু লোকজন  আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে উস্কানি দিচ্ছিলেন।

আন্দোলনকারীরা রেলগেট অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। তারা দলীয় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। দলীয় কার্যালয়ে সামনে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা রেলস্টেশন সংলগ্ন ছাত্রলীগের দলীয় কার্যালয় আগুন দেয়। একই এলাকায় শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হন। তাদের মধ্যে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬৮ জনকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত বিশাল সরকারকে (১৮) বগুড়া হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পথে কালাই উপজেলা সদরে তিনি মারা যান। তাকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য নেওয়া হয়। কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজনীন নাহার ডেইজি বিশাল সরকারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিশাল সরকারের মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বিকেলে  আন্দোলনকারী শহরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান করছিলেন। তারা পুলিশ সুপার কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ, সদর থানা কার্যালয় ঘেরাও করতে আসেন। এ সময় আরও দুইজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এখন শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, আমি, এমপিসহ ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

চম্পক কুমার/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *