অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে রাবি শিক্ষককে অপসারণের দাবি 

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে রাবি শিক্ষককে অপসারণের দাবি 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে অনার্সের ভুয়া সনদের বিষয়ে জানার পরও ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্র বাবদ ঘুষ নেওয়া, গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি, একাডেমিক পরিসরে অনিয়ম ও দুর্নীতি, ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।   

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে অনার্সের ভুয়া সনদের বিষয়ে জানার পরও ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্র বাবদ ঘুষ নেওয়া, গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি, একাডেমিক পরিসরে অনিয়ম ও দুর্নীতি, ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।   

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রেজিস্ট্রার দপ্তরে ও নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর তারা এ বিষয়ে পৃথক স্মারক লিপি জমা দিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপক্ষে একের পর এক বিভিন্ন উসকানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দিতে থাকেন, যা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন দমনে সরকারের পৈশাচিক গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং উসকে দেয়। এছাড়া একাডেমিক পরিসরে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অপমান-অপদন্ত করা, পরীক্ষার খাতায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, হুমকি-ধমকি দেওয়া, বিভাগের অর্থ তছরুপ করা ও নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করা, টার্গেট করে অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়াসহ তার নানা অপকর্ম ও অত্যাচারে আমাদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নিম্নে ওনার কিছু উল্লেখযোগ্য অপকর্ম সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো-

১. ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি : আন্দোলন চলাকালীন ১৬ জুলাই মুসতাক আহমেদ বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সবাইকে ঢালাওভাবে রাজাকার উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার উল্লেখ করে তাদের ক্লাস নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। ১৭ জুলাই সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে নৃশংস হামলাকে সমর্থন ও উসকে দেন। 

২. বিভাগের ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাৎ : আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে যে, মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব (৫ মে ২০২১-৪ মে ২০২৪) পালনের সময় বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা তছরুফ করেছেন। বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। 

৩. নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি : তিনি বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে রাতবিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ) মেসেজ করেন। যা সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা এর বিবরণ এখানে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত। 

৪. একাডেমিক পরিসরে দুর্নীতি : একটা সেমিস্টারে পাঁচ থেকে সাতটি ক্লাস নিয়ে কোর্স সমাপ্ত করেন তিনি। এটা তার দীর্ঘদিনের অনুসৃত রীতি ও পদ্ধতি। ক্লাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা হতো ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ক্লাসে অনিয়মের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে খাতা পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। 

৫. অছাত্র ও সন্ত্রাসীকে ছাত্রলীগের নেতা বানাতে জালিয়াতি করে ঘুষ নিয়ে বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। 

অতএব অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদকে এই বিভাগের শিক্ষক পদ থেকে চাকরিচ্যুত ও অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনকে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত এবং বিভাগকে কলঙ্কমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার কাছে নিবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মুসতাক আহমেদ বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার বিষয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি বরাবর বলে আসছি কোটা পদ্ধতিই আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী, ছাত্র -জনতাকে বুলেটের আঘাতে হত্যা করা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। আমার স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছে। কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়।

এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, আসলে এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়। তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

জুবায়ের জিসান/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *