২৮ বছর ধরে এক টাকায় চা-পেঁয়াজু বিক্রি করছেন আপন

২৮ বছর ধরে এক টাকায় চা-পেঁয়াজু বিক্রি করছেন আপন

এক পিস পেঁয়াজুর দাম এক টাকা। এক টাকায় মিলছে এক কাপ চা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে মাত্র এক টাকায় চা-পেঁয়াজু বিক্রি করে যাচ্ছেন নীলফামারী সদর উপজেলার সন্ন্যাসীতলা বাজারের দোকানি আপন আহম্মেদ। 

এক পিস পেঁয়াজুর দাম এক টাকা। এক টাকায় মিলছে এক কাপ চা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে মাত্র এক টাকায় চা-পেঁয়াজু বিক্রি করে যাচ্ছেন নীলফামারী সদর উপজেলার সন্ন্যাসীতলা বাজারের দোকানি আপন আহম্মেদ। 

বর্তমান বাজারে প্রতি পিস পেঁয়াজু ও এক কাপ চা পাঁচ টাকার কমে কোথাও বিক্রি হয় না। কিন্তু আপন আহম্মেদ তার ব্যতিক্রম। ১৯৯৫ সাল থেকে তার দোকানে ১ টাকার চা ও পেঁয়াজুর স্বাদ নিচ্ছেন ক্রেতারা। শুধু তার গ্রামের মানুষই নয়, বিকেল হলেই কম দামে সুস্বাদু চা-পেঁয়াজু খেতে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ভিড় করেন তার দোকানে। দাম কম হলেও তার দোকানের চা ও পেঁয়াজু খুবই সুস্বাদু বলে জানান ক্রেতারা।

সম্প্রতি সন্ন্যাসীতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামীণ পাকা রাস্তার এক পাশে ‘ভাই ভাই টি স্টোর’ নামে ছোট্ট একটি দোকান। পাশেই জ্বলছে চা ও পেঁয়াজু তৈরির চুলা। ঘরের ভেতরে চুলার ধোঁয়ায় বারবার চোখ মুছছেন আপন। বসার জন্য রয়েছে কাঠের তৈরি কয়েকটি বেঞ্চ। দোকানে সাজানো আছে মচমচে পেঁয়াজু।

চা-পেঁয়াজু খেতে আসা হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই পেঁয়াজু এখানকার ঐতিহ্য। এখানে অনেক লোক নানাপ্রান্ত থেকে আসে। অনেক সময় বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসি। আমি এখানে প্রায়ই আসি। কখনো একা আসি কখনো বন্ধুদের নিয়ে আসি।

নীলফামারীর নতুন বাজার এলাকার জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাগিনা ঢাকায় থাকে। তাকে যখন বললাম এক টাকায় চা-পেঁয়াজু পাওয়া যায়। সে সেটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। তাই তাকে নিয়ে এসেছি।

চা খেতে আসা আমজাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চা-পান খেতে এসেছি। মাঝে মধ্যেই এখাকার এক টাকার চা আর এক টাকার পেঁয়াজু খেতে আসি। দাম এক টাকা হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু। এখানে আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন।

কথা হয় এক টাকায় চা ও পেঁয়াজু বিক্রেতা আপন আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাজীবন একই দামেই চা-পেঁয়াজু বিক্রি করব। আমি সকালে নিজের কৃষিজমিতে কাজ করে বিকেলে দোকানের কার্যক্রম শুরু করি। বেচা-বিক্রি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। প্রতিদিন ২০ কেজি ডালের পেঁয়াজু বিক্রি হয়। দিনে ৭-৮ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ও দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চলে।

তবে এই এক টাকায় বিক্রির পেছনে আরেকটি গল্প জানালেন আপন। বললেন, আমি এ ব্যবসা শুরু করেছি ১৯৯৫ সালে, তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিই। তখন এ বাজারে কয়েকটি দোকান ছিল। সে সময় বাজারে এক লোকের দোকানে চা-বিস্কুটসহ ছয় টাকা বিল হয়েছিল। কিন্তু তার কাছে পাঁচ টাকা ছিল। এক টাকা দিতে না পারায় দোকানদার ওই লোককে গলা ধাক্কা দিয়ে বাজার থেকে বের করে দিয়েছিল। সেই বিষয়টি আমি অনুভব করেছি। সেই পরিস্থিতি থেকে দেখেছি আমরা অনেকে বাবা মাকে দেখি না। এদের মনে আকাঙ্ক্ষা থাকে বাজারে গিয়ে চা খাব। বাজারে চায়ের দাম বেশি থাকায় তারা খেতে পারেন না। অল্প টাকায় কীভাবে লোকজনকে খাওয়ানো যায়, সেই চিন্তা থেকে নামমাত্র মূল্যে আমি এক টাকায় চা এবং এক টাকায় পেঁয়াজু বিক্রি করি। অনেক অসহায় মানুষকে ফ্রিও খাওয়াই।

তিনি বলেন, ব্যবসায় মুনাফা করা আমার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। কত মানুষ মানবিক কাজে লাখ লাখ টাকা দান করেন। আমারতো টাকা নেই। তাই ছোট ব্যবসার পাশাপাশি মানুষকে নামমাত্র মূল্যে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পেঁয়াজু খাওয়াই। চা-পেঁয়াজু খেতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে। তাতে ব্যবসা আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।

খোকশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষকে এক টাকায় চা-পেঁয়াজু খাওয়ান আপন ভাই। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে এখানে খেতে আসি। একজন নিম্নআয়ের মানুষও যে সমাজে এভাবে অবদান রাখতে পারেন, তার উদাহরণ চা বিক্রেতা আপন আহম্মেদ।

তিনি আরও বলেন, আপন ভাই নিম্নআয়ের মানুষ। তার এক টাকায় চা বিক্রির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ভাইরাল হয়েছে তাতে এখন প্রচুর কাস্টমার আসছে। এতে তার চা-পেঁয়াজুর বিক্রি বেড়েছে, লাভ না হলেও লোকসান নেই। তবে কেউ সহযোগিতা করলে তিনি লাভবান হতে পারতেন। 

আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *