সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন বলেছেন, আমরা যদি শুধু কেন্দ্র নিয়ে থাকতাম তাহলে এই বিপ্লব কখনোই সফল হতো না। আজকে যারা দেশ শাসন করছেন, জনগণ তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং তাদেরকে মনে রাখতে হবে। কেন্দ্রে বসে থেকে শাসন করলে চলবে না। জনগণের কথা মাথায় রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। আপনাদেরকে আসতে হবে রাজশাহীত এবং শুনতে হবে দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। যিনি অটো চালান তার কথা শুনতে হবে, যিনি রিকশা চালাচ্ছেন তার কথাও শুনতে হবে। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ। কেননা ছাত্র-ছাত্রীরাদের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষেরাও নেমে এসেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন বলেছেন, আমরা যদি শুধু কেন্দ্র নিয়ে থাকতাম তাহলে এই বিপ্লব কখনোই সফল হতো না। আজকে যারা দেশ শাসন করছেন, জনগণ তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং তাদেরকে মনে রাখতে হবে। কেন্দ্রে বসে থেকে শাসন করলে চলবে না। জনগণের কথা মাথায় রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। আপনাদেরকে আসতে হবে রাজশাহীত এবং শুনতে হবে দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। যিনি অটো চালান তার কথা শুনতে হবে, যিনি রিকশা চালাচ্ছেন তার কথাও শুনতে হবে। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ। কেননা ছাত্র-ছাত্রীরাদের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষেরাও নেমে এসেছে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের মুক্তমঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে ‘আগামীর বাংলাদেশ : তারুণ্যের ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মানজুর আল মতিন বলেন, বিপ্লবের একটা পর্যায় আমরা পার করছি। সেই পর্যায়ে একটা স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। কিন্তু দীর্ঘ যে পুরোনো স্বপ্ন আমাদের, যে স্বপ্নে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়বো, স্বপ্নের সুন্দর একটা শিক্ষাব্যবস্থা, সুন্দর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়বো, আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে এখনো বাকি। তাই আমাদের লড়াইটা দীর্ঘ। যে দীর্ঘ সংগ্রাম, সেখানে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন থেকে কী শিখেছি সেটাই মনে হয় বড় প্রশ্ন। আমি গান করা লোক, কখন ঢোল বাজাই, কখনো সরদ নিয়ে থাকি, কখনো বাঁশি বাজাই একটু আগে যখন আসরের নামাজের জন্য সবাই আমাকে ডাকছিল তখন নজরুলের ভাষায় বলেছিলাম (আমি গুনাহগার বে খবর, নামাজ পড়ার নেই অবসর)। এমন একটা সমাজে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, যেখানে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, যে গুনাগার নয় আমার মতো, আর আমার মতো পাপি বান্দা সবাই এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটা লড়াই করেছি। এটা সবচেয়ে বড় শক্তি এই লড়াইয়ের। এই লড়ায়ে যেমন মাদরাসার ছাত্র শহীদ হয়েছে, তেমনি নাস্তিকও শহীদ হয়েছে। এইখানেই আমাদের এই লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, একটা সময় ছিল যখন দেয়াল লিখনে বা গ্রাফিতিতে মন ভরাতো, ভাবতাম সেখানে হয়তো ক্যালিওগ্রাফি ভালো নাও লাগতে পারে। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে, ক্যালিওগ্রাফিও সমান সুন্দর। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে, যেমন স্যামা-সংগীত সুন্দর তেমনি সুন্দর কোরআনের তেলাওয়াত, তেমনি সুন্দর মন্দিরের ঘণ্টার ধ্বনি। এই সব মিলেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটা জায়গা যেখানে সব আদর্শ মিলতে পেরেছে, আমরা মেলাতে পেরেছি। এই সাফল্য আমাদের। এইসব ভেদাভেদ ভুলেই আমরা লড়াইয়ে দাঁড়িয়েছি। এই ভেদাভেদ যেন নতুন করে আমাদের মাঝে না আসে। কারণ লড়াইয়ের মাত্র শুরু।
তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন পনেরো বছরের স্বৈরাচার, এটা ভুল। ১৯৭১-এর পরে যে লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিলেন তাদের কি মর্যাদা দিয়েছি আমরা, সত্যি বলতে সেই মর্যাদা আমরা দিতে পারিনি। সলিমুল্লাহ খানের একটা কবিতা মনে পড়ছে, ‘একদিন শুনবো ইয়াহিয়া খান সে ছিল ছদ্মবেশে, সেও ছিল মুক্তিযোদ্ধা, আমি আর বিস্মিত হব না’। সত্যিই বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলছিলাম, কিন্তু সেখান থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বছরের অন্যায়-অবিচার থেকে সামনে এগোবো, যার একটা সুবর্ণ সুযোগ আজকে তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে পেছনে ফিরে তাকাবার কোনো সুযোগ নাই। আমাদের সামনে এগোতেই হবে। এ আন্দোলন ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না।
এ সময় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের অন্যতম সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী। তিনি বলেন, পেশাগত জীবনে আমি একজন চিকিৎসক, তবে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি একজন মা হিসেবে। যখন আমাদের সন্তানদের রক্ত রাজপথে ঝরতে শুরু করলো, তখন আমার পক্ষে চুপ থাকা আর সম্ভব ছিল না। রাজপথে তোমাদের দেখেই সাহস ও অনুপ্রেরণা পাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক, কলা অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব, বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. শাহেদ জামান, আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদসহ প্রায় ২৫ জন শিক্ষক ও দুই হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
জুবায়ের জিসান/এএমকে