বাংলাদেশি হিন্দুদের সম্পর্কে যা বোঝেন না ভারতীয় হিন্দুরা

বাংলাদেশি হিন্দুদের সম্পর্কে যা বোঝেন না ভারতীয় হিন্দুরা

বাংলাদেশি হিন্দুরা বাংলাদেশ নিয়ে কী চায়, বাংলাদেশ কেমন হোক— এ ব্যাপারে ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল ধারণা আছে বলে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন রিয়া চক্রবর্তী নামের এক ভারতীয় লেখিকা।

বাংলাদেশি হিন্দুরা বাংলাদেশ নিয়ে কী চায়, বাংলাদেশ কেমন হোক— এ ব্যাপারে ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল ধারণা আছে বলে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন রিয়া চক্রবর্তী নামের এক ভারতীয় লেখিকা।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লেখা নিবন্ধে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রিয়া চক্রবর্তী তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশি হিন্দুদের অবস্থানের বিষয়টি।

তিনি লিখেছেন, গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। তখন দুটি জিনিস তার মাথায় আসে। প্রথমটি হলো ছাত্র আন্দোলনের বিজয় হওয়ায় তিনি বেশ খুশি হন। দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।

ওই সময় তারা খবর পেতে থাকেন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশিরা হিন্দুদের মন্দির, খ্রিস্টানদের চার্চ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্পদ্রায়ের উপসানলয় পাহারা দেওয়া শুরু করেন। যেমনটা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সব মানুষ কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করেছিলেন। এইবারও ঠিক একইভাবে কাজ করছিলেন তারা।

ভারতীয় হিন্দুরা কী করছিল

এই লেখিকা বলেছেন, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশি হিন্দুরা কী করছিলেন, কী বলছিলেন সেটি শোনারও সময় দেয়নি ভারতীয় হিন্দুরা। এমনকি কিছু কিছু ভারতীয় হিন্দু বলতে থাকে বাংলাদেশে হিন্দুদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারেন কেবল হাসিনাই। অনেকে বলতে থাকেন, এরজন্য বাংলাদেশে (হাসিনার মতো) স্বৈরাচারের প্রয়োজন আছে।

কিন্তু আসলে বাংলাদেশে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র ও জনতার যে বিপ্লব হয়েছে সেটিতে শত শত হিন্দু যোগ দিয়েছেন এবং অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। যেমনটি তারা করেছিলেন ভাষা আন্দোলনে, ছয় দফা আন্দোলনে, ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পক্ষে।

কিন্তু ভারতীয় এবং প্রবাসী হিন্দুরা বলতে থাকেন বাংলাদেশি হিন্দুদের গণহত্যা থেকে বাঁচাতে হবে। কিছু কিছু উগ্রপন্থী এআই দিয়ে মৃত হিন্দুদের ভুয়া ছবি তৈরি করে বিশ্ব হিন্দু সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করার দাবিও জানাতে থাকে।

তিনি আরও লিখেছেন, বাঙালি সম্প্রদায়ে উগপ্রন্থী হিন্দুদের আসলে কোনো উপস্থিতি নেই। মানে তারা বাস্তবতা সম্পর্কে জানে না। কিন্তু তারাই বাংলাদেশি হিন্দুদের (কথিত) গণহত্যা থেকে রক্ষাকারী হিসেবে একমাত্র শেখ হাসিনাকে অভিহিত করতে থাকে।

এছাড়া টুইটারে অনেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মিয়ানমারের অং সান সুচির সঙ্গে তুলনা করেন। অথচ সুচি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনে সামিল হয়েছেন। সেখানে ড. ইউনূস সংখ্যালঘু নির্যাতনের সম্পূর্ণ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

এই লেখিকা ভারতীয় হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের সঙ্গে আসলে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জেনে অ-বাংলাদেশি হিন্দুদের কথা বলতে হবে। কারণ তাদের ভুয়া ও ভুল তথ্য বাংলাদেশি হিন্দুদের সত্যিকারের চাওয়ার বিষয়টিকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং হিন্দুদের আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। কারণ ভারতীয় হিন্দুরা যেসব তথ্য এখন ছড়াচ্ছে সেগুলো বিদেশি প্রোপাগান্ডা হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি ভারতীয় হিন্দুদের প্রতি আরও আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের কাঠামোগত পরিবর্তনের যে দাবি বাংলাদেশি হিন্দুরা জানাচ্ছেন সেটি শুনতে হবে।

সবশেষে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশি হিন্দুরা আসলে অসহায় নয়। কোনো বিদেশি শক্তিকে তারা নিজেদের বাঁচাতে বলছেন না। তারা চান না বাংলাদেশকে (হাসিনার মতো) কোনো স্বৈরাচার শাসন করুক, স্বৈরাচারী সরকার ফিরে আসুক। এবং অবশ্যই তারা নিজ বাড়ি ছাড়তে চান না।

বাংলাদেশি হিন্দুদের আসলে যা প্রয়োজন সেটি হলো— তারা একটি অন্তর্ভুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চান। যে বাংলাদেশে সবাই সবার অধিকার পাবে।

নিবন্ধটি সংক্ষেপ করা হয়েছে

এমটিআই

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *