সাংবাদিক মেহেদী হাসানের সব স্বপ্ন ছিল বাবা-মাকে ঘিরে

সাংবাদিক মেহেদী হাসানের সব স্বপ্ন ছিল বাবা-মাকে ঘিরে

‘স্ট্রোকের রোগী আমি, তিনটা ব্লক আছে আমার হার্টে। মেহেদীর সপ্ন ছিল আমার হার্টের অপারেশন করাবে। আমার মেহেদীর সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। প্রতি মাসেই আমার ওষুধ লাগে। আমার ছেলেটাও নেই আমার ওষুধও নেই। কে আমারে ওষুধ কিনে দেবে? কে আমারে দেখবে? কে আমার সংসার চালাবে? এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’ 

‘স্ট্রোকের রোগী আমি, তিনটা ব্লক আছে আমার হার্টে। মেহেদীর সপ্ন ছিল আমার হার্টের অপারেশন করাবে। আমার মেহেদীর সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। প্রতি মাসেই আমার ওষুধ লাগে। আমার ছেলেটাও নেই আমার ওষুধও নেই। কে আমারে ওষুধ কিনে দেবে? কে আমারে দেখবে? কে আমার সংসার চালাবে? এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হওয়া ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার মেহেদী হাসানের (৪০) বাবা মোশারেফ হোসেন হাওলাদার। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মেহেদী হাসান ।

শুক্রবার (২ আগস্ট) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের বাড়িতে কথা হয় তার বাবা মোশারেফ হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে। 

তিনি আরও বলেন, আমি অসুস্থ ও অসহায়। আমার কোনো ইনকাম নেই। আমি চারবার স্ট্রোক করছি, মেহদী আমাকে ডাক্তার দেখাইছে, সব কিছু করাইছে। মেহেদীর স্বপ্ন ছিল বাবা-মারে ওমরা হজ করাইয়া ঘরের কাজ ধরবে। আস্তে আস্তে সব দেনা পরিশোধ করবে। এগুলোই ওর স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন তো ভেঙে গেল।

মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানেই হাসান মেহেদীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। পাকা সড়কের পাশেই দোচালা টিনের ঘর ভেঙে কিছুদিন আগে মেহেদী তৈরি করেছেন আধা পাকা টিনশেড বাড়ি। তবে এজন্য মেহেদীকে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা মেহেদী ছিলেন পরিবারের সবার প্রিয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী সবার বড়। তাই তার প্রতি সবার যেমন বাড়তি ভালোবাসা, তেমনি মেহেদীও ছিলেন পরিবারের প্রতি আন্তরিক। মেহেদীর বেড়ে ওঠা এবং তার বিভিন্ন স্মৃতি এখনো কাঁদাচ্ছে স্বজন ও এলাকাবাসীদের। 

মেহেদীর খালা শাহানুর বেগম বলেন, মেহেদী হাসানের ছয় মাস ও তিন বছর বয়সী দুই কন্যা রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। অসুস্থ বাবা-মার সেবায় কখনো আপোস করেনি।

এলাকাবাসীরা জানান, মেহেদী হাসান একজন শিক্ষিত ও ভালো একজন মানুষ ছিলেন। খুবই নম্র ও ভদ্রভাবে চলাফেরা করতো ।কখনো কারো সাথে খারাপ আচরণ করতেন না। মিশুক ও হাসিখুশি ছিল। 

মৃত্যুর পর মেহেদীর স্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। মেহেদী হাসান ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ২৪, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশের আলোয় কাজ করেছেন। 

এছাড়া কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় ঢাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাউফলের মেহেদীসহ ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল গ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নবীন তালুকদার (৩২), কনকদিয়া ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের মঈনউদ্দিনর ছেলে ভ্যানচালক মো জাহাঙ্গীর (৪৫)ও কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলে ছাত্র আল আমিন (১৬)। বাউফল থানা পুলিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরিফুল ইসলাম সাগর/আরকে 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *