জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কার্যত প্রশাসন ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষার মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ‘বে-আইনিভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিশেষজ্ঞ ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২ তম ব্যাচের উপসচিববৃন্দ’।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) ‘বে-আইনিভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিশেষজ্ঞ ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২ তম ব্যাচের উপসচিববৃন্দ’ ব্যানারে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করে তারা।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু হলো সচিবালয়। সচিবালয় অনেকগুলো মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে একটি মন্ত্রণালয় হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হলো সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য মেধাভিত্তিক দক্ষ জনসম্পদ তৈরি ও ব্যবস্থাপনা। কিন্তু মন্ত্রণালয়টি কার্যত ‘প্রশাসন’ নামক একটি ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষার মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব বরাবরে আবেদন করে এসএসবির সকল সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুলিপি দেওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসএসবির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে সুপিরিয়র জনবল নিয়োগ ও পদায়ন করে থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অন্য সদস্যরা হলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, অর্থসচিব, জননিরাপত্তা সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব এবং কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। তাদের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদের জনবল। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে কর্মকর্তাদের মেধা, জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুপারিশ করা তাদের একমাত্র কাজ।
পদোন্নতির জন্য তাদের সামনে থাকতে হবে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা, তাদের সার্ভিস রেকর্ড এবং সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন। প্রত্যেক ক্যাডারের আলাদা আলাদা জ্যেষ্ঠতার তালিকা থাকলেও যখন উপসচিব হিসেবে পুল সৃষ্টি হয়, তখন তাদের জন্য অনুসরণীয় একমাত্র জ্যেষ্ঠতার তালিকা হলো পিএসসি থেকে নির্ধারিত মেধাতালিকা। কিছু এসএসবি সেই তালিকা অনুসরণ করে না; বরং প্রশাসন ক্যাডারকে ভিত্তি ধরে পদোন্নতি দিয়ে থাকে। এর ফলে কেবল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই যথাসময়ে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এই এসএসবি কেবল একটি ক্যাডারকে প্রোমোট করার বোর্ড হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, বিষয়টি এতটাই ন্যক্কারজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মার্জ হওয়ার কারণে এই এসএসবি ইকোনমিক নামে একটি টেকনিক্যাল ক্যাডারকে (যারা মাত্র ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে এসেছে) সরকারের পুলভুক্ত পদগুলোতে রাতারাতি পদোন্নতি প্রদান করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫টি বিশেষজ্ঞ ক্যাডার থেকে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগত উপসচিবদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে প্রকারান্তরে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পেশাভিত্তিক ও দক্ষ জনবলের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবার তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে একদিকে সচিবালয়েও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না, অপরদিকে স্ব-স্ব ক্যাডারও তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসএসবি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভুল নীতি ও কর্মকাণ্ডের কারণে মেধাহীন, কোটারি, জুনিয়রদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারের সচিবালয় বা প্রশাসন ব্যবস্থা।
এতে আরও বলা হয়, অতি দ্রুত ক্যাডার নির্বিশেষে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিশেষজ্ঞ ২৫ ক্যাডারের বে-আইনিভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিবদের পিএসসির মেধাতালিকা অনুযায়ী স্ব-স্ব ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা নিশ্চিতপূর্বক যুগ্মসচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসএইচআর/এসকেডি