মানুষের মুখে বিজয়ের হাসি, জয়তু ছাত্র সমাজ

মানুষের মুখে বিজয়ের হাসি, জয়তু ছাত্র সমাজ

যেদিকে তাকাই মানুষের ঢল; লাখ লাখ জনতার ঢল; আবালবৃদ্ধবনিতার ঢল। সবার মুখে হাসি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ। ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ উচ্চারণ প্রত্যেকের মুখে। এ এক নতুন সৃষ্টির, নতুন জয়ের উল্লাস; নতুন ইতিহাস সূচনার উল্লাস; বিজয়ের উল্লাস; মুক্তি ও স্বাধীনতার উল্লাস।

যেদিকে তাকাই মানুষের ঢল; লাখ লাখ জনতার ঢল; আবালবৃদ্ধবনিতার ঢল। সবার মুখে হাসি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ। ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ উচ্চারণ প্রত্যেকের মুখে। এ এক নতুন সৃষ্টির, নতুন জয়ের উল্লাস; নতুন ইতিহাস সূচনার উল্লাস; বিজয়ের উল্লাস; মুক্তি ও স্বাধীনতার উল্লাস।

ক্ষমতা যখন দানব হয়ে ওঠে, শাসক যখন দাম্ভিক হয়ে ওঠে, মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ায় তখন এর পরিণতি ভালো হয় না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। কিন্তু শাসকরা কখনো সেই শিক্ষা নেয় না। ক্ষমতা শাসককে করে তোলে দানব। শাসক হয়ে ওঠে শোষক। একসময় তার স্বৈর চেহারা ফুটে ওঠে মানুষের সামনে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের জবাবদিহিতার অভাব, স্বচ্ছতার অভাব এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে জন অংশগ্রহণের অভাবের ফলে শাসক বনে যায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, যেখানে মানুষের জানমালের কোনো মূল্য থাকে না। মানবাধিকার অর্থহীন হয়ে পড়ে। গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়। কেবল একটা লুটেরা গোষ্ঠী যারা স্বৈরাচারের দোসর তারাই শাসকের গুণকীর্তন করে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়। যখন যা ইচ্ছা তাই করে সেই গোষ্ঠী। সমাজে তৈরি করে বিবাদ, বিভক্তি, হানাহানি ও খুনোখুনি।  

রাজনীতির কেন্দ্রে যখন মানুষ থাকে না, মানুষের সুখ-দুঃখের কোনো মূল্য থাকে না তখন সেই রাজনীতি মানুষের সমাজ তৈরি করতে পারে না। বরং মানুষের বুকের ওপর চেপে বসে। হরণ করে নাগরিকের সকল অধিকার। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার হরণ করে তারা এমন এক ভয়ের সংস্কৃতি জারি রাখে যেখানে মানুষ কথা বলতে ভয় পায়, লিখতে ভয় পায়, মত প্রকাশ করতে ভয় পায়।

দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বারবার বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে যে অবৈধ ক্ষমতার পাথর মানুষের বুকের ওপর চেপে বসে দম বন্ধ করে রেখেছিল, মানুষ সহ্য করতে করতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তখন সেই অপশাসনের বিরুদ্ধে, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে অনেকে। সেই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ নতুন মাত্রা পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যখন ছাত্রদের ন্যায্য দাবি না মেনে নিয়ে আইন আদালত খেলা জুড়ে দেয় সরকার। উপরন্তু ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে তরুণ শিক্ষার্থীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হয় নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদের। ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে। গণগ্রেফতার-গণহত্যা শুরু করে সরকার। 

এরপর সমন্বয়কদের আহ্বানে দেশের সকল শ্রেণিপেশার আপামর জনতা তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। দীর্ঘ  স্বৈরশাসন ও অপশাসনের ভার-গুম-খুন, গ্রেপ্তার, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার ইত্যাদি জনমানুষ আর মেনে নিতে পারেনি। অনেক লাশের ভার মানুষ আর সইতে পারেনি। শত শত তাজা প্রাণের ভার বইতে পারেনি সারা দেশের ছাত্রজনতা। গণঅসন্তোষে ফেটে পড়ে মানুষ। কারফিউর ভয় না করে নানা কর্মসূচি পালনের পর ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকাসহ সারা দেশের লাখ লাখ ছাত্রজনতা গণভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। শত শত লাশ পড়ার পর শেষ পর্যন্ত পতন ঘটে স্বৈরশাসনের। পুনরাবৃত্তি ঘটে ইতিহাসের। নির্মম আগস্ট ফিরে আসে অন্যভাবে। ক্ষমতাচ্যুতির আগস্ট, পলায়নের আগস্ট।

এখন সময় বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। পথ মসৃণ নয়। পাড়ি দিতে হবে অনেক বন্ধুর পথ। এজন্য দেশের সকল নাগরিককেই দায়িত্ব নিতে হবে। সবচেয়ে আমাদের ভরসা রাখতে হবে তরুণ তুর্কীদের ওপর, যাদের দুঃসাহসী লড়াই, যাদের দাবি ছাত্রজনতাকে এক করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যাদের লাশের উপর, যাদের আত্মত্যাগের কারণে  আমরা নতুন জয়ের স্বাদ পেয়েছি।

আমাদের মনে রাখতে হবে সকল নির্ভীক তরুণ শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে, নারী শিক্ষার্থীদের, সেইসব সমন্বয়কদের যাদের তীব্র আন্দোলনের মুখে, স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। মনে রাখতে হবে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা। ভবিষ্যতে রাজনীতিকদের মনে রাখতে হবে রাজনীতির কেন্দ্রে যেন মানুষ থাকে। মানুষের বিপক্ষে কোনো রাজনীতি নয়। আমাদের এ-ও মনে রাখতে হবে বিজয় যেন কোনো অবস্থাতেই বিষাদে পরিণত না হয়।

জয়তু ছাত্র সমাজ, জয়তু জনতা। জয়তু বিজয়ের নায়কেরা।

আহমেদ স্বপন মাহমুদ ।। কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *