বিয়ের ১৩ দিন পর শ্বশুরবাড়িতে মিলল নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ

বিয়ের ১৩ দিন পর শ্বশুরবাড়িতে মিলল নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ

এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পারিবারিক আয়োজনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তামান্না আক্তার। স্বামীর সংসারে গিয়ে ১৩ দিনেই তার জীবনের ইতি টানা পড়ে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি এসেছে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে। তবে তার পরিবারের দাবি ভিন্ন। অতি আদরের মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন মা-বাবাসহ স্বজনরা।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পারিবারিক আয়োজনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তামান্না আক্তার। স্বামীর সংসারে গিয়ে ১৩ দিনেই তার জীবনের ইতি টানা পড়ে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি এসেছে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে। তবে তার পরিবারের দাবি ভিন্ন। অতি আদরের মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন মা-বাবাসহ স্বজনরা।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই বাড়ির জব্বার মৃধার ছেলে মনির হোসেন মৃধার সঙ্গে গত ১৯ আগস্ট বিয়ে হয় পৌর এলাকার শাহজাহান গাজীর মেয়ে তামান্না আক্তারের।

বিয়ের পর সবকিছু ভালোই চলছিল তাদের। মনির গেল দুই সপ্তাহে তামান্নাকে নিয়ে একাধিকবার তার শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত করছেন। কোনো ধরনের অভিযোগ ছিল না তামান্নার বিরুদ্ধে। এমন তথ্যই জানা গেছে উভয় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে।

কীভাবে মনির-তামান্নার এত সংক্ষিপ্ত সংসার জীবনের অবসান হলো তা জানার জন্য বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যাওয়া হয় ঘটনাস্থল মনিরের নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে। সেখানে তাদের দুইটি ঘর আছে। তবে যে ঘরটিতে তামান্না আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি তালাবদ্ধ ছিল। মনির ও তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। আরেক ঘরে গিয়ে পাওয়া যায় মনির হোসেনের বড় বোন  শারমিন আক্তারকে।

শারমিন বলেন, আমার ভাই-ভাবির মধ্যে কোনো সমস্যা ছিল না। ঘটনার দিন (রোববার, ০১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভাবি আমার মায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন। মা তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি গোসল করতে গেলে তাকেও গোসল করার জন্য মা ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের সেমি পাকা ঘরের দিকে যান। কিছু সময় পরে আমি ওই ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ দেখি। অনেক জোর করে দরজা খুলে দেখি ভাবি ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার দিলে বাড়ির সব লোক জড়ো হয়। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

শারমিন আরও বলেন, ঘটনার সময় আমার ভাই ঘরে ছিল না। সে মাস্টার বাজারের দিকে যাচ্ছিল। ফোন দিয়ে জানালে সে ফেরত আসে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির কোনো কিছু হয়েছে বলে জানা নেই। শুনেছি, ভাবির সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের টিকটক ভিডিও দেখা গেছে। তবে আমার ভাইয়ের স্মার্ট ফোনটি এখন পুলিশের কাছে জব্দ।

কিছু সময় ওই বাড়িতে অপেক্ষা করে মনিরের পরিবারের অন্য কাউকেই পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন তাদের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তামান্নার বিষয়ে জানার জন্য যাওয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। পৌর এলাকার মোবারকদী গ্রামের গফুর গাজী বাড়িতে গিয়ে তামান্নার পরিবারের সব সদস্যদের পাওয়া যায়। পুরো পরিবার এখনো শোকাহত। মেয়ের কবরের কাছে কান্না করছেন মা আছমা বেগমসহ নিকটাত্মীয়রা।

তামান্নার মামা নাজমুল তপাদার বলেন, আমার দুই ভাগ্নি ও এক ভাগনে। ভাগিনা আসিফ বড়। তামান্না ও তানহা ছোট। বোন জামাতা শাহজাহান একজন কৃষক এবং সহজ সরল। যে কারণে তামান্নাকে বিয়ে দেওয়ার আগে মনিরের পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। তাদের বিষয়ে সবাই ভালো বলেছেন। ঘটনার পরে মনে হচ্ছে এই ছেলের অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। তাছাড়া কী কারণে আমার ভাগ্নি হত্যার শিকার হবে। নিশ্চই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পরে আমরা তার পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

নাজমুল আরও বলেন, আমার বোন জামাতা পড়তে জানেন না এবং মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত ছিলেন। এ কারণে ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদী হলেও এজহারের বিবরণ পড়তে পারেননি। ফলে থানা থেকে যে এজহার লেখা হয়েছে তাতেই তিনি কোনোরকম স্বাক্ষর দিয়েছেন। ওই এজহারে পুলিশ ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচিত করার অপরাধ লিখেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২ সেপ্টেম্বর ভাগ্নিকে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

মেয়ের নাম নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা আছমা বেগম। তিনি বলেন, আমার মেয়ের মধ্যে কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। তাদের কোনো সমস্যার কারণেই আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।

তামান্নার সহপাঠী মারিয়া ও জয়ন্তী বলেন, শিশু শ্রেণি থেকে আমরা একসঙ্গে পড়ছি। এ বছর আমরা এসএসসি দিয়েছি। তামান্না খুবই ভালো ছিল। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে যে-সব অপবাদ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো একেবারেই সঠিক না। এমন কোনো কিছু থাকলে আমরা অনন্ত জানতাম।

মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বাবা শাহজাহান। তিনি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ, গরু বিক্রি ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধুমধাম করে এ বছরের ১৯ আগস্ট মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়েও খুবই আনন্দ উৎফুল্ল ছিল। বিয়ের পরেও তাদের কোনো ধরনের সমস্যার কথা শুনিনি। গত ১ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে ঠিক কী কারণে হত্যার পর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে মনির হোসেন পরিবার নিষ্ঠুরভাবে ঝুলিয়ে রাখে, তা বলতে পারছি না। তারা এখন আমার মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দিচ্ছেন। কিন্তু সঠিক তদন্ত করলে আমার মেয়ের বিষয়ে এমন কোনো কিছুই পাওয়া যাবে না। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। সুরতহাল শেষে তামান্নার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তার বারা শাহজাহান ২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

আনোয়ারুল হক/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *