নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ্র নাথ রায়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এতে পদত্যাগের শঙ্কায় গত ৭ দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এদিকে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির বর্তমান সভাপতি আশরাফুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ্র নাথ রায়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এতে পদত্যাগের শঙ্কায় গত ৭ দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এদিকে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির বর্তমান সভাপতি আশরাফুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
কুন্দপুকুর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা জামিল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয়টি আমরা এলাকাবাসী বিভিন্নভাবে অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছি আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া শিখে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য। শুরু থেকে এই বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে এই প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ্র নাথ রায় যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ে দলীয়করণ শুরু করে। বিদ্যালয়টিকে নির্দিষ্ট একটি দলের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে তৈরি করেছেন তিনি। এই প্রধান শিক্ষক যে কোনো দলীয় প্রোগ্রাম, সভা বিদ্যালয়ের কক্ষে পরিচালনা করেন। শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যায়টিতে লেখাপড়া হয় না বললেই চলে। তার তদারকির অভাবে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত হয় না। অনেক খাতে আর্থিক সহয়তা আসলেও তিনি এই টাকাগুলো বিদ্যালয়ের উন্নয়নের খাতে খরচ না করে নিজের পকেটে ভরতেই ব্যস্ত থাকেন। তাই বিদ্যালয়ের উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার পদত্যাগ চাই আমরা।
বিদ্যালয়টির সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক জিকরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৪ সালে এই বিদ্যালয়ে কমিটির মাধ্যমে আমি সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। পরবর্তীতে আমার পদটি শূন্য দেখিয়ে এনটিআরসি থেকে পুনরায় অন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন থেকে আমি এই বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ নাথ রায় আমাকে আশ্বস্ত করেন আমার নিয়োগটি তিনি ঠিক করে আমাকে বাংলা বিষয়ে যোগদান করাবেন। সেই ভরসায় আমি কাজ করেই চলেছি। পরবর্তীতে তিনি আমার কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অপারগতা দেখালে তিনি বাংলা বিষয়ের পদটি শূন্য দেখিয়ে এনটিআরসি বরাবর শিক্ষকের জন্য আবেদন করেন। আমার চাকরির বয়স শেষ এখন আমি কি করব জানি না। এমন দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক থাকলে শুধু শিক্ষার্থীদের নয় শিক্ষক সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মুমিন ঢাকা পোস্টকে বলে, আমি অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য এই বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র নিতে আসি। ছাড়পত্রের জন্য আমার কাছে ৮৩০ টাকা দাবি করা হয়। আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি কোনো বিদ্যালয়ে এভাবে টাকা নেওয়া হয় না। ছাড়পত্রের টাকা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডেরও কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। তাহলে প্রধান শিক্ষক কেন আমাদের জিম্মি করে এই টাকা নিচ্ছেন? তাই এরকম দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের আমরা পদত্যাগ চাই।
ছাড়পত্রের টাকার নেওয়া বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয়টির হিসাব সহকারী সজল কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাড়পত্রের ৮৩০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে প্রধান শিক্ষক আমাকে যে খাতে যত টাকা নিতে বলেন আমি তাই নেই। এ বিষয়ে বোর্ডের নির্দেশনা আছে কিনা আমার জানা নেই। এটি প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন।
নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জনি ইসলাম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের সন্তান অনেক দূর থেকে সাইকেলে করে স্কুলে আসি। প্রায় দিনে আমাদের স্কুল থেকে সাইকেল চুরি হয়। আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে এই সাইকেল চুরি বন্ধে একটি গ্যারেজ তৈরি করে চেয়েছিলাম। আমরা শুনেছি সাইকেল গ্যারেজের জন্য স্কুলে বরাদ্দ এসেছিল কিন্তু আমাদের সাইকেল গ্যারেজটি হয়নি। গ্যারেজের বিষয়ে স্যারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন ওই টাকা অন্য খাতে খরচ হয়েছে। তোমরা স্কুলের একটি কক্ষ সাইকেল গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করো। স্কুলের কক্ষ যদি সাইকেল গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করি তাহলে গ্যারেজের টাকা গেল কোথায়? এমন দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক আমরা চাই না।
বিদ্যালয়টির সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিটন রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০২৩ সালে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ্র নাথ রায় কখনো আমাকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব দেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের সময় গত মাসে প্রধান শিক্ষক ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একটি রেজুলেশন তৈরি করে আমার কাছে পাঠায় যেখানে দুই অর্থ বছরের মোট আয় দেখিয়েছেন ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮২ টাকা ও ব্যয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ২৭ হাজার ৪০২ টাকা যা আমার কাছে অসঙ্গতি মনে হয়েছে। তাই আমিসহ কমিটির অনেকেই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেনি। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রণোদনা বাবদ ৫ লাখ টাকা ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাবদ ১০ টন টিআর যা আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। যা প্রধান শিক্ষক স্কুল কমিটির সঙ্গে পরামর্শ না করে নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করেছেন। এসব বরাদ্দের হিসাব প্রধান শিক্ষক সভাপতি হিসাবে আমাকে কখনো দেননি। বর্তমানে কমিটি বিলুপ্ত। তিনি আমাকে রেজুলেশন স্বাক্ষর করার জন্য খুব চাপ প্রয়োগ করছেন। এতে আমি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দ্বীজেন্দ্র নাথ রায়ের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ছুটিতে আছি। তবে কতদিনের ছুটিতে তা তিনি নিশ্চিত করেননি। বিদ্যালয়ে তার পদত্যাগের জন্য আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি মহল আমার পদত্যাগের বিষয়ে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আর্থিক আর কোনো বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির বর্তমান সভাপতি আশরাফুল হক এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শরিফুল ইসলাম/আরকে