উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা বছরে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে প্রায় ৬৭৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর এই ভর্তুকিই গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে এমন অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ে ভর্তুকি পাচ্ছে।
উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা বছরে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে প্রায় ৬৭৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর এই ভর্তুকিই গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে এমন অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ে ভর্তুকি পাচ্ছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমীক্ষার ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিপর্যয় প্রতিরোধ বিষয়ক ক্যাম্পেইন ‘ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ উন্মোচন এবং অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা পরিচালিত ‘হাউ দ্য ফাইন্যান্স ফ্লো’ শীর্ষক সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত সমীক্ষায় উন্নত দেশগুলোর জনগণের টাকা কীভাবে জলবায়ু ধ্বংসের পেছনে খরচ হচ্ছে এবং এই অর্থ দিয়ে কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ও বাণিজ্যিক কৃষি খাতগুলো লাভবান হচ্ছে, সেসব চিত্র দেখানো হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিশ্বের দক্ষিণাংশের দেশগুলোর জনগণের ভর্তুকির ৪৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে। এছাড়া, বাণিজ্যিক কৃষি খাত এই ভর্তুকি থেকে প্রতি বছর ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভবান হচ্ছে।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণাংশের দেশগুলোর নবায়নযোগ্য শক্তি রূপান্তরে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তা ভর্তুকির তুলনায় আশ্বর্যজনকভাবে নগণ্য। ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থ ব্যবহার হয় নবায়নযোগ্য শক্তিতে। টেকসই ও সবুজ নবায়নযোগ্য শক্তিতে অর্থায়নের হার নিম্নমুখী। পাশাপাশি আগের থেকে বেশি দেশ এ জলবায়ু সংক্রান্ত ঋণঝুঁকিতে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে নাগরিক সংগঠন (সিএসও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, স্থানীয় সংগঠনের পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণের দেশগুলো যে পরিমাণ জলবায়ু অর্থায়ন অনুদান পাচ্ছে, তা সর্বমোট ভর্তুকির ২০ ভাগের এক ভাগ। যা জলবায়ু ধ্বংসের বিপরীতে জলবায়ু মোকাবিলার তুলনায় অপর্যাপ্ত। সেজন্য আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠাতব্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ কে বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যে একমত হতে হবে। এই জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত ও সুপরিকল্পিত কর্ম-পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তারা।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ, জবাবদিহিতা এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আহমেদ জুবায়ের বলেন, গ্রিন এনার্জির বাস্তবসম্মত কী কী বিকল্প আছে, তা ভেবে দেখা দরকার। আমরা তহবিল পাই, কিন্তু এটার প্রক্রিয়া জটিল। এটি সহজ করা যায় কিনা তা দেখতে হবে।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত পুনর্গঠন করা দরকার উল্লেখ করে জার্মান দূতাবাসের হেড অব জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন কাউন্সেলর ফ্লোরিয়ান হেলেন বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত পুনর্গঠন করতে হবে। সরকারকে গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন নিয়ে এমনভাবে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে মানুষ এতে আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশে যেসব জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনে পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে, সেগুলো কীভাবে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে রূপান্তর করা যায়, সেটিও ভেবে দেখতে পারে সরকার।
ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন বলেন, ঢাকার বাসা-বাড়ির ছাদে ব্যবহার করা ১০০ ভাগের ৮০ ভাগ সোলার প্যানেলই অকার্যকর হয়ে আছে। কিন্তু এসব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় না। এখন নতুন করে পুনর্মুল্যায়ন করে সোলার নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) হেড অব রিনিয়েবল এনার্জি এনামুল করিম পাভেল, এইচএসবিসির কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটির প্রধান সৈয়দা আফজালুন নেসা, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট জাসটিস টিমের ডেপুটি ম্যানেজার তানজিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরএইচটি/কেএ