বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে সবাইকে পূর্বের মডেলের পরিবর্তে নতুন টেকসই ও কার্যকরী মডেল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে সবাইকে পূর্বের মডেলের পরিবর্তে নতুন টেকসই ও কার্যকরী মডেল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে পলিথিন-এসইউপি বর্জনবিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘সম্প্রীতির ভাবনায় বৈষম্যহীন আবহে টেকসই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃক্ষরোপণ, প্রকৃতি চিত্রাঙ্কন ও পলিথিন-এসইউপি বর্জন বিষয়ক আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসাব হাবীব।
এর আগে, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন অতিথিরা। পরে সিনেটে শিক্ষার্থীদের আঁকা প্রকৃতি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন পরিদর্শন করেন তারা।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। পরে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তা এদেশের মানুষ কখনো দেখেনি। জীবাশ্ম জ্বালানির অবাধ ব্যবহারের কারণেই পৃথিবী এমন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। কার্বনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বলা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনারা কি চলতি মডেলেই সীমাবদ্ধ থাকবেন নাকি টেকসই মডেলের কথা ভাববেন।
বনাঞ্চলের গুরুত্ব ও বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে বন উজাড়ের হার অনেক বেশি। আমাদের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ করতে হবে। তাছাড়া এমন গাছ লাগাতে হবে যা পরিবেশের জন্য উপযোগী। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গাছের কিছু প্রজাতি সিলেক্ট করা হয়েছে, যা আমরা লাগাতে নিরুৎসাহিত করবো। আমাদেরকে নতুন আইন প্রবর্তন করতে হবে কারণ আমাদের জলবায়ু এখন অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে বনাঞ্চলের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমরা অনেক বার রক্ষা পেয়েছি। আমাদের সেদিকের অবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।
পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বেশ কয়েকবার জোর তদারকির কারণে সেটার ব্যবহার কমে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন তদারকির অভাবের ফলে সেটা আবারও বেড়েছে। পলিথিনের পরিবর্তে কাগজের মোড়ক ব্যবহার বাড়াতে পারলে দেশে আবার পলিথিনের ব্যবহার কমে যাবে। আমাদের কাছে পলিথিন সুবিধাজনক হলেও সেটা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা যদি পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে দেই তাহলে বিক্রেতারাও পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে দেবে।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিষয়ে তিনি বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতির পাশাপাশি তা আমাদের দেহেও সেটা সময়ের পরিক্রমায় প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। ভারত কিংবা থাইল্যান্ডও এখন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বাদ দিয়েছে। তারা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে প্লাস্টিকের ব্যবহার পূরণ করছে। আমাদের চর্চা বাড়ানো উচিত যেন আমরা আশঙ্কা ও ভয়ের পৃথিবী থেকে সরে এসে সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের পাশাপাশি নিজেদের গাছ লাগানোর প্রতি জোর দিতে হবে।
এ সময় তিনি বনাঞ্চলের গুরুত্ব ও উপকারিতা বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সাথে সংযুক্ত সবাইকে এ বিষয়ে অবদান রাখার অনুরোধ জানান।
আলোচকের বক্তব্যে উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন দেশের বনাঞ্চল, উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা, দেশি ও বিদেশি গাছের প্রয়োজনীয়তা, দেশি গাছের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তাছাড়া, দেশীয় গাছের স্থলে বিদেশি গাছের অপকারিতা, ঝড়ের সময় গাছের ভূমিকা, কোথায় গাছ লাগালে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে এসব বিষয়ে আলোকপাত করেন।
আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্লাবের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমএ