কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার পর বাসায় ফিরে গেছেন শিক্ষার্থীরা। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার পর বাসায় ফিরে গেছেন শিক্ষার্থীরা। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
তাদের মধ্যে একজনের চোখে গুলি লেগেছে। বাকিদের পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লেগেছে। তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ কুমিল্লা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীর চোখে গুলি লাগে। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন্স এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের সদস্য নাজমুল হাসান শাওনের মাথা ফেটে যায়। এছাড়াও আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শনিবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লার অন্তত ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশো শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় কান্দির পাড় এলাকায় লোকারণ্য হয়ে যায়। একই সময় নগরীর নিউ মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের শতাধিক নেতাকর্মীও অবস্থান নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে থাকলে তাদেরকে ধাওয়া দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও নগরীর ঈদগাহ, ফৌজদারি হয়ে মিছিল নিয়ে আবার পুলিশ লাইন্সের দিকে যান। এ সময় পেছন থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইট পাটকেল ও গুলি নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। হামলায় নিজেদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইন্সের ভেতরে ঢুকে যান দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তাদেরকে পুলিশ ভ্যানে করে সেখান থেকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয় পুলিশ।
হামলার পর পুরোদমে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুরো শহরের দখল নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার পর থেকে শান্ত হতে থাকে পুরো নগরী। এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ৮টার দিকে একজনও নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। শান্ত রয়েছে সারাদিনের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর ভয়ের নগরী কুমিল্লা।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্ল্যাহ খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিক্ষোভকারীদের ইটপাটকেলে আমাদের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা এখন থেকে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকব এবং সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ব কুমিল্লায়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফজলে রাব্বি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লা মেডিকেলে মোট ছয়জন আহত রোগী এসেছিল। তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংঘর্ষের সময় আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছে একটি চক্র। এখানে নাকি কয়েকজন মারা গেছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। একজনও নিহত হয়নি। গুজব প্রতিরোধে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আরিফ আজগর/আরএআর