হাত ও পায়ে বাতের ব্যথা। আজকেও (শনিবার) চট্টগ্রাম নগর চকবাজার থানা এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন আঞ্জুমান আরা। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট মোড়। অসুস্থতার মধ্যেও মেয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের সমাবেশে অংশ নেন তিনি।
আঞ্জুমান আরার মেয়ের নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে ওই বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন। সহপাঠী হত্যার প্রতিবাদ জানাতে সমাবেশে আসেন তিনি।
চট্টগ্রামের সমাবেশে এই মা-মেয়ের দিকে আলাদা নজর ছিল সবার। বিকেল ৫টার দিকে সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল নিউমার্কেট মোড় থেকে জুবলি রোড হয়ে চলে যেতে থাকে। তখনো মনোয়ারা বেগমরা জহুর হকার্স মার্কেটের সামনের সড়কের একপাশে অবস্থান নিয়ে আলাদা আলাদা দুটি প্লেকার্ড প্রদর্শন করেই যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে মনোয়ারা বেগমের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে একটি প্রতীকী ছাত্রের ছবির সঙ্গে লিখা ছিল, ‘বুক পেতেছি গুলি কর’। আর আঞ্জুমান আরার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লিখা ছিল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিল যখন শেষ হয়, তখন এই মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। এর মধ্যে মনোয়ারা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দেশে আমার সহপাঠী, বড় ভাই ও ছোট ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাই বিবেকবান কোনো মানুষের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও খুনিদের ঘৃণা জানাতে আমরা এখানে এসেছি।
আঞ্জুমান আরা বলেন, আমার ছেলে-মেয়েদের হত্যা করা হচ্ছে। আমি অসুস্থ অবস্থায়ও প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।
এর আগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার দুপুর থেকে মোড়ে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিউমার্কেট মোড় আশেপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সরেজমিনে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সহপাঠী হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন তাদের অভিভাবকরাও। এসময় রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনকে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তালি দিয়ে সংহতি জানাতে দেখা যায়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে নাম প্রকাশের অনিচ্ছায় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের (শনিবার) আন্দোলনে পুলিশ কোনো বাধা দেবে না। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো কর্মসূচি পালন করতে পারবে। তবে তারা যাতে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড না করে সেই অনুরোধ থাকবে। পাশাপাশি নাশকতাকারীদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
এর আগে গতকাল (শুক্রবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়করা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ঘোষণা দেন, সারাদেশে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে বলে ওই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়।
এমআর/এসকেডি